উত্তর ইসরায়েলের গভীরে হিজবুল্লাহর রকেট হামলা

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলিতে, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ছবি : রয়টার্স

উত্তর ইসরায়েলের গভীরে রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। ওই অঞ্চলের হাইফা শহরের পূর্ব দিকের রামাত ডেভিড বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে কয়েক ডজন রকেট হামলা চালানো হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতের এসব হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

হিজবুল্লাহর দাবি সত্যি হলে গত অক্টোবর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি রকেট ও বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলের সবচেয়ে গভীর এটাই ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রথম রকেট হামলা।

আজ রোববার মধ্যরাতের পর উত্তর ইসরায়েলজুড়ে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী লেবানন থেকে ১০টি রকেট ছোড়ার কথা জানিয়েছে। এসব রকেটের অধিকাংশই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার আগেই জব্দ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ লেবাননজুড়ে কয়েক শ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য হামলা ব্যর্থ করতে এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, তারা উত্তর ইসরায়েলে বেশি মানুষের জমায়েতের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এই অঞ্চলে দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফাতেও এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

বৈরুত থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক আলি হাশেম শনিবার রাতে উত্তর ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ (ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে) ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর এবারই প্রথমবারের মতো হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র (ইসরায়েলের অভ্যন্তরে) ২০ কিলোমিটারের বেশি দূর পর্যন্ত পৌঁছেছে। এবারই তাঁরা প্রথমবারের মতো ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে। (এই দাবির সত্যতা হলো) এরই মধ্যে আমরা হাইফা শহরের পূর্ব দিকের রামাত ডেভিড বিমান ঘাঁটিসহ বিভিন্ন এলাকায় রকেট জব্দ করার কথা শুনেছি।’

এক বিবৃতিতে হামলার কথা নিশ্চিত করে হিজবুল্লাহ জানায়, এবার তারা তথাকথিত ফাদিয়া-১ ও ফাদিয়া-২ রকেট ছুড়েছে। গত কয়েক মাসে তারা ইসরায়েলের দিকে যেসব রকেট ছুড়েছিল তা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি কাতিউশা রকেট।

গত মঙ্গল ও বুধবার লেবাননজুড়ে হামাস সদস্যেদের ব্যবহার করা কয়েক হাজার তারহীন যোগাযোগযন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকিতে একযোগে বিস্ফোরের ঘটনা ঘটে। লেবানন সরকার ও হিজবুল্লাহর দাবি, ইসরায়েল বৈদ্যুতিক বার্তার মাধ্যমে এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। দুই দিনের বিস্ফোরণে সাধারণ মানুষসহ সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ৩৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয় প্রায় তিন হাজার।

এরপর গত শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণের শরতলিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়।

শুক্রবারের হামলায় হিজবুল্লাহর কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলও নিহত হন। হামলার সময় বৈরুতের শহরতলির একটি ভবনে তিনি বৈঠক করছিলেন। হামলায় পুরো ভবনটি ধুলোয় মিশে যায়।

গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলে রকেট হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ। জবাবে লেবাননে গোষ্ঠীটির বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

হামলার কারণে উভয় দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল লেবানন সীমান্তবর্তী নিজেদের উত্তরাঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া নাগরিকদের এখন ফেরত আনতে চায়। এ জন্য অঞ্চলটি নিরাপদ করতে লেবাননে সম্প্রতি বিমান হামলা বাড়িয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। কিন্তু গাজা যুদ্ধ বন্ধ না করা পর্যন্ত ইসরায়েলে হামলা চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে হিজবুল্লাহ।