হিজবুল্লাহকে দুর্বল করতে গিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ইসরায়েল
ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর গতকাল সোমবার ছিল লেবাননের সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। এদিন সকাল থেকেই দক্ষিণ লেবাননজুড়ে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে তীব্র বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
লেবানন সরকারের পক্ষ থেকে হামলায় সর্বশেষ ৪৯২ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও হামলা করা হবে বলেও সতর্ক করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই দেশটির সঙ্গে হিজবুল্লাহর পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দ্রুত বাড়ছে। ইসরায়েলের বিমান হামলা যত বাড়বে, যুদ্ধের উত্তেজনাও তত দ্রুত বাড়বে।
সোমবার হামলা শুরুর আগে আইডিএফ দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দাদের মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করেছিল। তারা যেসব লক্ষ্যবস্তুতে এদিন হামলা চালিয়েছে, তার আশপাশের বাসিন্দাদের আগেই ‘নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে’ সরে যাওয়ার এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি ইসরায়েলের।
উত্তর-পূর্ব লেবাননের বেকা ভ্যালি হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি। ইসরায়েল এরপর সেখানে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ আক্রান্ত হলেও তাদের পাল্টা হামলা চলানোর যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে এবং এ কারণেই ইসরায়েলের বন্ধু ও শত্রু—উভয় দলই আরও খারাপ কিছুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
এবারের এই হামলা শুরুর আগেই গত বছরের ৮ অক্টোবরের পর প্রায় এক লাখ লেবাননি ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিকতম লড়াই শুরু হয় ওই দিন থেকেই। পালিয়ে যাওয়া এসব মানুষ অদূর ভবিষ্যতে বাড়িতে ফিরতে পারবেন এমন আশা নেই।
এখন ইসরায়েল আবার বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে। তারা হয়তো ভাবছে, এ মুহূর্তে হিজবুল্লাহ বেশ খানিকটা দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এটাই হয়তো তাদের সামনে সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর সত্যিকারের ক্ষতি করার সুবর্ণ সুযোগ। সীমান্তের ওপারের পাহাড় ও শহরগুলোর কৌশলগত চিত্রও এ সুযোগে পাল্টে দিতে চাইছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত কয়েক দশক ধরে চলছে। তবে এবারের সংঘাতময় পরিস্থিতির সূচনা হয়েছে গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে; যেদিন গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়।
এবারের এ হামলা শুরুর আগেই গত বছরের ৮ অক্টোবরের পর প্রায় এক লাখ লেবাননি ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিকতম লড়াই শুরু হয় ওই দিন থেকেই। পালিয়ে যাওয়া এ লাখ মানুষ অদূর ভবিষ্যতে বাড়িতে ফিরতে পারবেন এমন আশা নেই।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব চালানোর প্রতিবাদে প্রায় এক বছর ধরে হিজবুল্লাহ নিয়মিত সীমান্তের এপার থেকে ওপারে ইসরায়েলের ভূমিতে রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা ইসরায়েলি সেনাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং সেখানকার সম্পদ বিনষ্ট করতে চাইছে।
হিজবুল্লাহর হামলার কারণে নিরাপত্তা উদ্বেগে প্রায় ৬০ হাজার ইসরায়েলিকে তাঁদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল সরকার তাঁদের নিজ বাড়িঘরে ফেরানোর পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। দেশটির সরকার সর্বশেষ যে যুদ্ধ লক্ষ্যের কথা জানিয়েছে, সেখানে স্পষ্ট করে এ কথা বলা আছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইসরায়েলের অন্য মিত্ররা বিশ্বাস করে, ভয়াবহ এ সংকটময় পরিস্থিতি ঠান্ডা করার একমাত্র উপায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই।
যত দিন গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হবে, তত দিন ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখার কথা আগেই বলেছেন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। যদিও গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আশার আলো নেই।
এদিকে হিজবুল্লাহ আক্রান্ত হলেও তাদের পাল্টা হামলা চলানোর যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে এবং এ কারণেই ইসরায়েলের বন্ধু ও শত্রু—উভয় পক্ষই আরও খারাপ কিছুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে মূলত হিজবুল্লাহর ব্যবহার করা স্বল্প প্রযুক্তির হাজার হাজার পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এসব ঘটনায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত প্রায় ৩ হাজার। লেবানন, হিজবুল্লাহ এবং এই গোষ্ঠীর মিত্র যেমন ইরান এ ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। যদিও ইসরায়েল এর দায় স্বীকার করেনি, তবু অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটা ইসরায়েলেরই কাজ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পেজার ও ওয়াকিটকিগুলো বিস্ফোরিত হওয়ার কয়েক মাস আগেই ইসরায়েল এসব যন্ত্রের ভেতর বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর গতকাল লেবাননের নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের ফোনে ফোনে সতর্কবার্তা পাঠানো ও কল করার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল এ ইঙ্গিতই দিল যে শত্রু হিজবুল্লাহই শুধু নয়, সাধারণ লেবাননিদের ব্যক্তিগত তথ্যে অনুপ্রবেশ করার সক্ষমতাও রয়েছে তার।