গণহত্যার মামলাকে ‘বিদ্বেষপ্রসূত’ বলল ইসরায়েল, অভিযোগের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র–জার্মানি

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ছবি: রয়টার্স

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) করা মামলাকে ‘মারাত্মকভাবে বিকৃত’ ও ‘বিদ্বেষপ্রসূত’ বলে মনে করে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চালানো হামলার লক্ষ্য সেখানকার সাধারণ মানুষ নন।

গতকাল শুক্রবার এ মামলার শুনানি চলাকালে ইসরায়েলের পক্ষের আইনজীবী আদালতকে এসব কথা বলেন।

গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে গত ডিসেম্বরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রিটোরিয়ার অভিযোগ, এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল জাতিসংঘের গণহত্যাবিষয়ক কনভেনশন লঙ্ঘন করছে। গত বৃহস্পতিবার শুনানির প্রথম দিনে নিজেদের অভিযোগের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। আর গতকাল ছিল শুনানির দ্বিতীয় দিন। প্রিটোরিয়া চায়, বিচারকেরা যেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরায়েলকে চাপ দেন।

গতকাল শুনানি চলাকালে ইসরায়েলের পক্ষের আইনজীবী তাল বেকার বলেন, দুঃখজনকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা আদালতের সামনে ঘটনার বাস্তব ও ন্যায়সংগত চিত্রকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। তিনি কিছু ভিডিও ও ছবি ব্যবহার করে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামাসের হামলার ভয়াবহতার চিত্র উপস্থাপন করেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে গত ৭ অক্টোবর হামাসের চালানো ওই হামলায় ১ হাজার ১৪০ জন নিহত হয়েছে। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান হামলায় এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৪০০–এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

বেকার বলেন, ‘হামাস সদস্যরা মা-বাবার সামনে সন্তানদের নির্যাতন করেছেন, সন্তানদের সামনে মা-বাবাকে নির্যাতন করেছেন, মানুষ পোড়াচ্ছেন...পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ও অঙ্গচ্ছেদ করেছেন।’

এই আইনজীবীর দাবি, আত্মরক্ষার জন্যই ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে। গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা এ হামলার লক্ষ্য ছিলেন না।

বেকার বলেন, ‘হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল আত্মরক্ষার যুদ্ধ চালাচ্ছে, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নয়।’

আরও পড়ুন

মামলার বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি

এদিকে আইসিজেতে করা দক্ষিণ আফ্রিকার মামলাটিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এমন মন্তব্য করেছেন।

জার্মানিও আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফেন হেবেস্ট্রাইট এক বিবৃতিতে বলেন, ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ‘অমানবিক’ হামলা চালানোর পরই ইসরায়েল ‘আত্মরক্ষায়’ পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জার্মান ইতিহাস ও ইহুদিদের ওপর যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার আলোকে জার্মান সরকার সুনির্দিষ্ট করে জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন মেনে চলার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানিতে ইহুদি নিধনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে জেনোসাইড কনভেনশন সই হয়।  

ইহুদি নিধনের ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা থেকে জার্মানিকে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে ইসরায়েলকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়।