রাফায় ইসরায়েলি অভিযান হবে নজিরবিহীন বিপর্যয়

জাতিসংঘ মহাসচিব রাফায় সেনা অভিযান ঠেকানোর জন্য অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়ি। আহত হয়েছেন বাবা ও ছেলে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কান্নার বাঁধ মানছে না বাবার। গতকাল ফিলিস্তিনের রাফায়ছবি: রয়টার্স

গাজা উপত্যকার রাফা এলাকায় ইসরায়েলি হামলা আসন্ন। সেখানে ইসরায়েল মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সামান্য যে সুযোগ দিয়েছে, তাকে রাফায় হামলা চালানোর ন্যায্যতা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। রাফায় ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে তাদের ওপর যে দেশের যতটুকু প্রভাব আছে, তা সর্বোচ্চভাবে খাটাতে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার রাফায় সেনা অভিযান শুরুর অঙ্গীকার করার পর জাতিসংঘ মহাসচিব এ আহ্বান জানালেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ‘চুক্তি হোক না–হোক’ রাফায় স্থল অভিযান চালাবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে রাফায় হামলা না চালাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু সেখানে ইসরায়েলের স্থল অভিযান আসন্ন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, রাফায় ইসরায়েলি সেনারা স্থল অভিযান চালালে ‘নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়’ সৃষ্টি হবে। রাফায় বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে।

গ্রিফিথস আরও বলেন, ‘অসুখ, দুর্ভিক্ষ, গণকবর ও সম্মুখ সমর থেকে বাঁচতে গাজার দক্ষিণতম পয়েন্টে পালিয়ে আসা লক্ষাধিক মানুষের জন্য এই স্থল অভিযান আরও বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটাবে।’

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩৪ হাজার ৫৬৮ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ইসরায়েল এক মাস আগে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ এড়ানোর ক্ষেত্রে খুব সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। জরুরিভাবে সেখানে আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

গ্রিফিথস বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে সামান্যতম অগ্রগতি হয়েছে তাকে রাফায় হামলার প্রস্তুতি বা পুরোপুরি সামরিক অভিযানের ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

গুতেরেস ইসরায়েলের প্রতি উত্তর সীমান্তে দুটি ক্রসিং খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বান জানান।

এর আগে গত মার্চে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গাজায় মে মাস নাগাদ দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। জুলাই নাগাদ পুরো ফিলিস্তিনে দুর্ভিক্ষ ব্যাপক রূপ নিতে পারে। গুতেরেস বলেছেন, সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষজন ইতিমধ্যে ক্ষুধা ও রোগব্যাধিতে মরতে শুরু করেছে।

ইসরায়লের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গুতেরেস বলেন, বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়াতে সম্ভাব্য সব ধরনের চাপ দেওয়া খুবই জরুরি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা জোরদারে তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করবেন। মার্কিন কর্মকর্তারা গতকাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রাফায় ইসরায়েলি হামলার পক্ষে নয়—এই বার্তা নেতানিয়াহুকে জানাবেন ব্লিঙ্কেন।