উত্তর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করল বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি
উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘জীবন রক্ষাকারী’ খাদ্যের সরবরাহ স্থগিত করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সংস্থাটি বলেছে, সেখানে নাগরিক শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ায় ত্রাণ সরবরাহে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ‘চূড়ান্ত রকমের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার’ মুখে পড়তে হচ্ছে।
ডব্লিউএফপি বলেছে, ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের এ সিদ্ধান্ত হালকাভাবে নেওয়া হয়নি। উত্তর গাজায় তাদের কর্মীরা মানুষের ভিড়, বন্দুক থেকে গুলিবর্ষণ ও ত্রাণসামগ্রী লুট হওয়ার মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ডব্লিউএফপি বলেছে, গত দুই দিন গাজা উপত্যকায় তাদের কর্মীরা মানুষের মধ্যে ‘নজিরবিহীন মরিয়াভাব’ লক্ষ করেছেন। ক্ষুধার কারণে এরই মধ্যে সেখানকার লোকজন মারা যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, গত ডিসেম্বর থেকে এমন সতর্কতা উচ্চারণ করে আসছে জাতিসংঘ।
উত্তর গাজার মানুষ যে দ্রুত ক্ষুধা ও রোগব্যাধির মুখে পড়তে যাচ্ছে, সেখানকার সবশেষ অবস্থা এ আশঙ্কাকে তুলে ধরছে বলে উল্লেখ করেছে ডব্লিউএফপি।
গাজায় গত বছরের অক্টোবরে স্থল অভিযান শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনী ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে উত্তরের ওয়াদি গাজা থেকে উপত্যকাটির দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। খালি করার নির্দেশ দেওয়া এলাকার মধ্যে রয়েছে গাজা সিটিও। যুদ্ধ শুরুর আগে গাজার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা ছিল এটি।
ইসরায়েলের ওই নির্দেশের পর উত্তর গাজার অধিকাংশ বাসিন্দা অন্যত্র সরে যান। তবে কয়েক লাখ মানুষ সেখানেই থেকে যান কিংবা ইসরায়েলি সেনাদের অবরোধের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেননি।
গত মাসে ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, উত্তর গাজায় রয়ে যাওয়া অন্তত তিন লাখ মানুষ তাদের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
উত্তর গাজায় এত দিন অপ্রতুল ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছিল। আর এই কার্যক্রমও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা ছাড়পত্রের ওপর নির্ভরশীল।
চলতি সপ্তাহান্তে ডব্লিউএফপি ত্রাণ সরবরাহ শুরুর আশা করছিল। এ লক্ষ্যে উত্তর গাজার বুভুক্ষু ও মরিয়া বাসিন্দাদের সহায়তা করতে প্রতিদিন ১০টি করে ত্রাণবাহী লরি পাঠাচ্ছিল তারা।
কিন্তু গত রোববার উত্তর গাজায় যাওয়ার পথে ওয়াদি গাজা তল্লাশি ফাঁড়ির কাছে ত্রাণবাহী একটি বহরকে ‘ক্ষুধার্ত মানুষেরা ঘিরে ধরেন’। এ সময় একাধিকবার বহরের ওপর ওঠার চেষ্টা চালান তাঁরা। এরপর বহরটি গাজা সিটিতে ঢোকার পথে গুলিবর্ষণ, ‘ব্যাপক উত্তেজনা ও মানুষের ভীষণ ক্ষোভের’ মুখে পড়ে।
এ ঘটনার বাইরে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ শহরের মধ্যে চলার সময় কয়েকটি লরিতে লুটপাট চালানো হয়। এ সময় মারধর করা হয় এক চালককে।
ডব্লিউএফপি বলেছে, গত দুই দিন গাজা উপত্যকায় তাদের কর্মীরা মানুষের মধ্যে ‘নজিরবিহীন মরিয়াভাব’ লক্ষ করেছেন। ক্ষুধার কারণে এরই মধ্যে সেখানকার লোকজন মারা যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত সোমবার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক যৌথ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, উত্তর গাজার পরিস্থিতি এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।