নেতানিয়াহুর আপত্তি ‘অগ্রহণযোগ্য’

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত অবসানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের’ সব ধারণার বিরোধী নন বলে দাবি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তাঁর এ বক্তব্য দৃঢ়ভাবে নাকচ করে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবসহ পশ্চিমা দুটি দেশের শীর্ষ কূটনীতিকেরা।

নেতানিয়াহু ও বাইডেন গতকাল শুক্রবার ফোনে কথা বলেন। তাঁরা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন। গাজায় সাড়ে তিন মাস ধরে চলা ইসরায়েলের হামলার মধ্যে দুই নেতার মধ্যে এ ফোনালাপ হয়।

প্রায় এক মাসের মধ্যে শুক্রবার প্রথমবারের মতো ফোনে কথা হয় বাইডেন ও নেতানিয়াহুর। ফোনালাপের পর সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ও দুই রাষ্ট্র সমাধান সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই রাষ্ট্র সমাধানের কয়েকটি ধরন রয়েছে। জাতিসংঘের কিছু সদস্যদেশ রয়েছে, যাদের নিজস্ব কোনো সামরিক বাহিনী নেই।

তবে বাইডেনের এমন মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই গতকাল শনিবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণার বিরুদ্ধে নিজের জোরালো অবস্থানের কথা জানান নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, হামাসকে ধ্বংস করার পর ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজার ওপর নিরাপত্তামূলক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে, যাতে গাজা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে না পারে। এটা এমন এক বাস্তবতা, যা ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে নেতানিয়াহু আরও বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই জর্ডানের (নদী) পশ্চিমের গোটা অঞ্চলের ওপর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে। এই অঞ্চলে ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের ভূখণ্ডও অন্তর্ভুক্ত।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ এই বক্তব্য সংঘাত শেষে গাজা ও পশ্চিম তীরের ভবিষ্যৎ শাসন বিষয়ে তাঁর সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার মতপার্থক্যকে আরও গভীর করবে বলে মনে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধারণাটি ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ নামে পরিচিত। তবে হোয়াইট হাউস গত সপ্তাহে স্বীকার করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সরকার স্পষ্টভাবে এই বিষয়গুলোকে ভিন্নভাবে দেখে।

নিজের রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে এসেছেন নেতানিয়াহু। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে তিনি নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

ইসরায়েলি হামলার মুখে এক আশ্রয়শিবির থেকে আরেক আশ্রয়শিবিরে ছুটে চলেছেন ফিলিস্তিনিরা। গতকাল দক্ষিণ গাজার মিসর সীমান্তের কাছে রাফায়
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত শান্তি আলোচনায় ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের’ কথা বলা হয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে ইসরায়েলের পাশাপাশি পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীর নিয়ে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলের রাজনীতিকেরা এ ধারণার বিরোধিতা করে আসছেন। এক দশক আগে এ শান্তি আলোচনা ভেস্তে যায়।

এমন আপত্তি ‘অগ্রহণযোগ্য’
দুই রাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান এবং ফিলিস্তিনি জনগণের একটি রাষ্ট্র পাওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। শনিবার উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় এক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গুতেরেস বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব প্রত্যাখ্যান এ সংঘাতকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দীর্ঘায়িত করবে, যা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। এটি বিভক্তি বাড়িয়ে তুলবে এবং সর্বত্র চরমপন্থীদের উৎসাহিত করবে।

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য দুই রাষ্ট্র সমাধান মেনে নিতে অস্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের রাষ্ট্র পাওয়ার অধিকার অস্বীকার করার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হতাশা ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস। আজ রোববার তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর বক্তব্য ‘হতাশাজনক’, যদিও এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

স্কাই নিউজ চ্যানেলকে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমনটি শোনা সত্যিই হতাশাজনক বলে আমি মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, আমরা একটি সমাধান পেতে পারি যদি না আমাদের দুই রাষ্ট্র সমাধান থাকে।’

দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে ফ্রান্সও। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফান সেজোর্ন বলেছেন, একটি রাষ্ট্র পাওয়ার অধিকার রয়েছে ফিলিস্তিনি জনগণের। এই লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে ফ্রান্স।