ইরানে বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ায় তারকাদের হুমকি
ইরানে ‘নীতি’ পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ায় তারকাদের (সেলিব্রিটি) আজ বৃহস্পতিবার সতর্ক করা হয়েছে।
এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ ৪১ জন নিহত হয়েছেন বলে সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে। আর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৭৬। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিক্ষোভকারী।
১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাসা আমিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল কুর্দিস্তান প্রদেশের সাকেজ থেকে রাজধানী তেহরানে আসেন। ‘শালীনভাবে’ হিজাব না পরার অভিযোগে দেশটির ‘নীতি পুলিশ’ মাসাকে আটক করে। তিন দিন পরে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নির্যাতনে মাসার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে ইরানের মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। ২০১৯ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভের পর এত বড় বিক্ষোভ আর হয়নি ইরানে।
এরই মধ্যে চলমান বিক্ষোভে ইরানের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়, অভিনয়শিল্পী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা সরকারকে জনগণের দাবি মেনে নেওয়ারও আহ্বান জানান।
তেহরানের প্রাদেশিক গভর্নর মোহসেন মানসুরিকে উদ্ধৃত করে ইরানের বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানায়, ‘বিক্ষোভের আগুনে যেসব তারকা বাতাস দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
গতকাল বুধবার ইরানের আরেক বার্তা সংস্থা মেহের জানায়, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সাবেক উপস্থাপক মাহমুদ শাহরিয়ারিকে ‘দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া এবং শত্রুপক্ষের প্রতি সংহতি’ প্রকাশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। ইরানের বিখ্যাত নারী সঙ্গীতশিল্পী মোনা বোরজুইকে বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তারের খবর এসেছে। বিক্ষোভের সমর্থনে একটি কবিতা পোস্ট করার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইরানের দুবারের অস্কার বিজয়ী পরিচালক আসগর ফারহাদি গত রোববার বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘তারা (বিক্ষোভকারীরা) সাধারণ অথচ মৌলিক অধিকারগুলো খুঁজছেন, যেগুলো থেকে রাষ্ট্র তাঁদের অনেক বছর ধরে বঞ্চিত করে আসছে।’
গত মঙ্গলবার ভিয়েনাতে সেনেগালের বিপক্ষে ফুটবল মাঠে জাতীয় সংগীতের সময় ইরানের খেলোয়াড়েরা কালো পোশাকে নামেন। ইনস্টাগ্রামে তারকা ফরোয়ার্ড খেলোয়াড় সর্দার আজমাওন এক পোস্টে কর্তৃপক্ষের নিন্দা জানান। পাশাপাশি তিনি দলের ওপর কণ্ঠরোধের আদেশ আরোপের অভিযোগ আনেন। পরে তাঁর পোস্ট তিনি সরিয়ে নেন।
সাবেক নামী খেলোয়াড় আলী করিমি ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে ক্রমাগত বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন এবং মাসার মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এমনকি পবিত্র পানিও এই কলঙ্ককে ধুয়ে ফেলতে পারে না।
ইরানের বিচারবিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই তারকাদের এই অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রব্যবস্থার ভেতর থেকেই যাঁরা বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন, আজ তাঁরা রাষ্ট্রের কঠিন সময়ে জনগণের সঙ্গে না থেকে শত্রুর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সবারই জানা উচিত, তাঁদের কারণে জনগণ ও দেশের যে পার্থিব এবং আত্মিক ক্ষতি হয়েছে, তার মূল্য চুকাতে হবে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি গতকাল এক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, দেশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।