মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব
লেবানন ঘিরে ইসরায়েলি হামলা জোরদারের মধ্যেই যুদ্ধবিরতির সাম্প্রতিক এ প্রচেষ্টার কথা জানাল যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা। আজ বুধবার দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এ দুটি সূত্রের একজন যুদ্ধবিরতির আলোচনার বিষয়ে জ্ঞাত ও আরেকজন লেবাননের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিবিদ। তাঁরা বলেছেন, ২০০৬ সালে গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত খসড়া অনুযায়ী দুই মাস সময় যুদ্ধবিরতি পূর্ণ বাস্তবায়নে কাজে লাগানো হবে। ২০০৬ সালে দক্ষিণ লেবাননকে অস্ত্রমুক্ত করতে এ খসড়া গৃহীত হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র সামা হাবিব বলেন, ‘আমরা কূটনৈতিক সমাধান চাই, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত খসড়া ১৭০১ পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করার সুযোগ দেবে এবং সীমান্তের উভয় পাশে ইসরায়েলি ও লেবাননের বাসিন্দাদের তাঁদের বাড়িঘরে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
লেবানন ঘিরে ইসরায়েলি হামলা জোরদারের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির সাম্প্রতিক এ প্রচেষ্টার কথা জানানো হয়েছে। এদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গতকাল লেবাননের পূর্বাঞ্চলের বালবেক শহর থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলেছে। এ শহরে ইতিমধ্যে অনেক এলাকা থেকে পালিয়ে আসা লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই বোমা হামলা শুরু হয়। তাই ওই এলাকা থেকে লোকজন দ্রুত সরে যেতে শুরু করেছেন। কিন্তু সেখানকার সাবেক মেয়র ফুয়াদ বুলক বলেন, লেবাননের কোথাও ইসরায়েলি হামলা থেকে নিরাপদ নয়।
এদিকে টানা তৃতীয় দিনের মতো খাইয়াম শহরে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে হিজবুল্লাহ। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ লেবাননের সারাফান্দে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। অন্যদিকে সিডনে হামলায় নিহত হয়েছেন ৭ জন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দূত আমোস হোচস্টেইন নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য আরও ভালো কৌশলের প্রয়োজন ছিল। কারণ, ইসরায়েল বা হিজবুল্লাহ কেউ–ই জাতিসংঘের খসড়া বাস্তবায়ন করেনি।
জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তার বদলে এখন ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে কূটনৈতিক সূত্র বলছে, যুদ্ধবিরতি করার জন্য চাপ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন। কারণ, ইসরায়েল এখনো সরাসরি লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বিমান হামলা বা সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে চাইছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ বলেছে, ইসরায়েল জাতিসংঘের খসড়া প্রস্তাবে পরিবর্তন চাইছে, যাতে তারা নিরাপত্তাহুমকি বোধ করলে অভিযান অব্যাহত রাখতে পারে।
লেবাননকে অবশ্য এখনো সরাসরি প্রস্তাব দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে লেবানন কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেভাগেই লেবাননে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। একই রকমভাবে গাজা নিয়েও যুদ্ধবিরতির চুক্তি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এক্সিওএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হোচেস্টেইন ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ব্রেট ম্যাকগ্রুক আজ বৃহস্পতিবার লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার চেষ্টা করবেন, যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
হোচেস্টেইন ও ম্যাকগ্রুক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ইসরায়েল ও মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, হিজবুল্লাহ শেষ পর্যন্ত গাজায় হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ করতে রাজি হবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা
এদিকে কাতারের দোহায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের এক মাসের কম সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেছেন মধ্যস্থতাকারীরা। সেখানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদপ্রধান ডেভিড বার্নিয়া, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান উপস্থিত ছিলেন।
তাঁরা স্বল্প মেয়াদে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি জিম্মি হস্তান্তর ও গাজায় মানবিক সহায়তার বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, স্বল্প মেয়াদে যুদ্ধবিরতি করা গেলে পরে তা বাড়ানো যাবে। এর মধ্যেই মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি দুই দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, যাতে জিম্মি বিনিময় করা যায়। নেতানিয়াহু বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পাননি।