বাশার আল-আসাদের পতনে ইরান দুর্বল হবে না: আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইসরায়েলবিরোধী ‘প্রতিরোধ’ দুর্বল হওয়া মানে কিন্তু তেহরানের শক্তি হ্রাস পাওয়া নয়। বুধবার এক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেছেন। বাশারের পতনের পর এটাই তাঁর প্রথম বক্তৃতা।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ‘কেউ কেউ প্রতিরোধের অর্থ বোঝেন না। (তারা) প্রতিরোধ দুর্বল হলে ইরান দুর্বল হবে বলে মনে করে।...ইরান বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী। ভবিষ্যতে ইরান আরও শক্তিশালী হবে।’
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নিজেদের ঘাঁটি থেকে সম্প্রতি ঝটিকা অভিযান শুরু করেন। ১২ দিনের কম সময়ের মধ্যে তাঁরা রাজধানী দামেস্ক দখল করেন। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়ের শাসনের অবসান হয়। ইরান ছিল এ পরিবারের অন্যতম মিত্র।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইরানের ইসরায়েলবিরোধী অনেকগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, যা ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ নামে পরিচিত। এ শক্তি তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে কৌশলগত ভূমিকা রেখেছে বাশার আল-আসাদের সিরিয়া। বিশেষ করে লেবাননে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে সিরিয়ার ভূখণ্ড ব্যবহার করত ইরান।
প্রতিরোধ অক্ষে থাকা হিজবুল্লাহ ছাড়া অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হলো গাজার হামাস, ইয়েমেনের হুতি এবং ইরাকের একাধিক ছোট ছোট শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী। এসব গোষ্ঠী ইসরায়েল ও দেশটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী।
ইরানের যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার কাছ থেকে। বুধবারের বক্তৃতায় তিনি বাশারের পতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তথা ‘জায়নবাদী সরকারকে’ দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সিরিয়ায় যা ঘটেছে, তা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের যৌথ ষড়যন্ত্রের ফসল। এটা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।’
সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য খামেনি ‘সিরিয়ার একটি প্রতিবেশী’ দেশকেও দায়ী করেছেন। বাশারের পতনে দেশটির ‘সুস্পষ্ট ভূমিকা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে তিনি দেশটির নাম উল্লেখ করেননি।
সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত থাকা দেশগুলো হলো ইরাক, ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানন ও তুরস্ক। এসব প্রতিবেশীর মধ্যে তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে বাশারকে উৎখাতে বিদ্রোহীদের নানা অংশকে সমর্থন দিয়ে আসছে
খামেনির মতে, সিরিয়ায় ‘আক্রমণকারীদের’ একেকজনের একেক উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তাঁদের লক্ষ্য আলাদা। তাঁদের কেউ কেউ উত্তর ও দক্ষিণ সিরিয়ায় ভূমি দখল করতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়।’
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সেনাবাহিনী রয়েছে। বাশারের পতনের পর জাতিসংঘের রক্ষণাবেক্ষণে থাকা নিরপেক্ষ (বাফার) অঞ্চলে সেনা পাঠিয়েছে ইসরায়েল। সিরিয়ার পূর্ব দিকের এ অঞ্চলের গোলান মালভূমি কয়েক দশক ধরে অধিকৃত করে রেখেছে ইসরায়েল।
সিরিয়ার কুর্দি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রেরও সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে তারা সেখানে থেকে হামলা পরিচালনা করে।