ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত
গাজার যুদ্ধবিরতি থেকে নজর সরাল লেবাননের হামলা
গাজায় এক বছর ধরে চলা ইসরায়েলি হামলা বন্ধে যে ক্ষীণ যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ছিল, তা এখন প্রায় বন্ধ।
লেবাননে সংকটের কারণে বিশ্বের নজর এখন গাজা থেকে সরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফিলিস্তিনিরা। লেবাননে ইসরায়েলি হামলার কারণে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। ফলে গাজায় এক বছর ধরে চলা ইসরায়েলি হামলা বন্ধে যে ক্ষীণ যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ছিল, তা–ও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
দুই সপ্তাহ ধরে ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লেবাননে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর মধ্যে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে হামলা করেছে ইসরায়েল। লেবাননের ভেতরে ঢুকে অভিযানও শুরু করেছে। সেখানে হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াই হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাদের। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। ইসরায়েল পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল ও গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে, লেবানন সংঘাতের ফলে গাজার সংঘাত বন্ধ হতে পারে। তবে কয়েকজন বিশ্লেষক, গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সন্দিহান।
গাজা শহরের বাসিন্দা হুশাম আলী বলেন, ‘লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু এখন লেবানন। এর মানে এই নয় যে গাজার সংঘাত এখনই শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
* গাজায় ইসরায়েলি হামলা থামার কোনো লক্ষণ নেই। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। * লেবাননে ইসরায়েল হামলা জোরদার করায় বিশ্বের মনোযোগ এখন সেখানে। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকা মিসর হতাশ।
ইরানের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গাজার অনেক বাসিন্দা একে স্বাগত জানিয়েছেন। তেহরান তাঁদের হয়ে লড়ছে—এটাই মনে করছেন তাঁরা।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেন, লেবানন সংঘাতের আগেই গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা অনেকটাই ম্লান ছিল। এখন আঞ্চলিক লড়াই ছড়িয়ে পড়ায় গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়বে।
লেবাননে ইসরায়েল হামলা জোরদার করার পর থেকে বিশ্বের মনোযোগ এখন সেখানে। এ ছাড়া গাজা যুদ্ধও দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে মনে করছেন মিসরের আল-হারাম পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের দৃষ্টি এখন ভিন্ন জায়গায় এটা বিপদের কথা নয়, বরং বিশ্বের কেউ আর চুক্তি বা যুদ্ধবিরতির কথা বলছে না, সেটাই বিপদ। এতে ইসরায়েল গাজা নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ও হামলা চালিয়ে যেতে পারবে।
গাজার ভেতরে ইসরায়েলি হামলা থামার কোনো লক্ষণ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকা মিসর যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় হতাশ। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার যুদ্ধবিরতি ব্যর্থতায় হামাসের দোষ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে গুরুত্বের মধ্যে রেখেছে, কিন্তু হামাস আলোচনা করতে অস্বীকার করেছে।
হামাসের কর্মকর্তা ও পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বলেন, গত আগস্ট মাসে যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থগিত হয়ে যায় কারণ, ইসরায়েলে গাজা থেকে সেনা সরানোর বিষয়টি মেনে নিতে রাজি হয়নি।
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতি বিশেষজ্ঞ ও লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের বিশেষজ্ঞ নোমি বার-ইয়াকোভ বলেন, ‘গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল বলে আসছে তারা সেনা অভিযান ও হামাস ও হিজবুল্লাহকে চাপে রেখে তারা জিম্মিদের মুক্ত করতে চায়। কিন্তু আমরা দেখেছি, এর বিপরীত বিষয়টিই সত্যি।’
নোমি বার-ইয়াকোভ বলেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে গাজার যুদ্ধবিরতিকে পেছনে সরিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। এখন তাদের গুরুত্ব হচ্ছে যতটা সম্ভব হিজবুল্লাহকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা ও তাদের সামরিক সরঞ্জাম যতটা সম্ভব নষ্ট করা।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী ৫ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগপর্যন্ত কোনো কিছুই ঘটবে না। কারণ, কেউই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ওপর কার্যকরভাবে চাপ দিতে পারছেন না। গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে নেতানিয়াহু সবচেয়ে বড় বাধা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে হিজবুল্লাহর গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর গত সপ্তাহে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এতে মিসরের পক্ষ থেকে উত্তেজনা কমানোর বিষয়টি আরও সীমিত হয়ে যায়।