গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানে দেরির দুই কারণ

গাজা সীমান্তে সাঁজোয়া যানসহ কয়েক লাখ সেনা পাঠিয়েছে ইসরায়েলছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বড় পরিসরে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে হামলার তীব্রতা বাড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা। তবে দৃশ্যত দুটি কারণে অভিযান বিলম্বিত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রথমত, কূটনৈতিক চাপের কারণে স্থল অভিযান বিলম্বিত হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, পর্দার আড়ালে ব্যাপক চাপ দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমা কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে, যাতে ইসরায়েল সম্ভাব্য স্থল অভিযান বিলম্বিত করে। উদ্দেশ্য আলোচনার মাধ্যমে আরও জিম্মিকে যাতে মুক্ত করে আনা যায়। বিশেষ করে, যেসব ইসরায়েলি নাগরিকের পশ্চিমা দেশগুলোয় দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তাঁদের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, স্থল অভিযান বিলম্বিত হওয়ার নেপথ্যে অভ্যন্তরীণ চাপও রয়েছে। গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিদের পরিবারগুলো দেশটির সরকারের প্রতি আরও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা বিক্ষোভও করেছেন।

এসব পরিবারের দাবি, গাজায় বন্দী থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির বিষয়টি যতক্ষণ না নিশ্চিত করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশটির সরকার যাতে স্থল অভিযান শুরু না করে।

ফলে ইসরায়েলি সমাজের কিছু অংশ থেকেও ক্রমবর্ধমান চাপ দিতে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে, যাঁদের আত্মীয়স্বজন গাজায় জিম্মি অবস্থায় আছেন। তাঁরা এখনই স্থল অভিযান শুরু করা থেকে সরকারকে থামাতে চাইছেন।

হামাস গত শুক্রবার জিম্মি দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেয়। এরপর আরও জিম্মি মুক্তি পেতে যাচ্ছেন কি না, এ নিয়ে ইসরায়েলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন

মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বন্দী মুক্তির জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে আরও সময় চাইছেন। এ জন্য গাজায় স্থল অভিযান বিলম্বিত করতে তাঁরা ইসরায়েলের প্রতি ঝুঁকেছেন বলে জানা গেছে।

স্থল অভিযান বিলম্ব করতে ইসরায়েলকে রাজি করাতে চাইছেন কি না, এমন প্রশ্নে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমি ইসরায়েলিদের সঙ্গে কথা বলছি।’ এর বাইরে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

চলতি মাসের মাঝামাঝি জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের দুটি শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এসব অভিযানে খুব বেশি হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গাজা থেকে পালানোর সময় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। হামাস জানিয়েছে, এতে অন্তত ৭০ জনের প্রাণ গেছে। তবে বড় পরিসরে স্থল অভিযান এখনো শুরু হয়নি।

আরও পড়ুন

স্থল অভিযানের প্রস্তুতি

এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থল অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিমান হামলা চালিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব কথা জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, যেসব ভবন নজরদারি এবং লুকিয়ে দূর থেকে গুলি চালানোর কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে হয়েছে, সেগুলোয় হামলা চালানো হয়েছে।

গতকাল এলিট গোলানি ব্রিগেডের কমান্ডারদের সঙ্গে আলাপে সেনাপ্রধান হার্জল হালেভি বলেন, ‘হামাস সদস্যদের এবং সংগঠনটির অবকাঠামো ধ্বংস করে দিতে আভিযানিক ও পেশাগত মিশনের অংশ হিসেবে আমরা গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করব।’

ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হার্জল হালেভি আরও বলেন, ‘গাজার অবস্থা জটিল এবং এটি ঘনবসতিপূর্ণ। শত্রুরা সেখানে অনেক কিছুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে আমরাও তাদের মোকাবিলায় প্রস্তুত।’

স্থল অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিমান হামলা চালিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর আকস্মিক ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এ সময় হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনাসহ দুই শতাধিক ব্যক্তিকে বন্দী করে।

জবাবে এর পর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ এবং বিরামহীন বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে চার হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের ৭০ ভাগই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

আরও পড়ুন