সিরিয়ার পক্ষগুলোকে রাজনৈতিক আলোচনার প্রস্তাব

সিরিয়া নিয়ে দোহার বৈঠকে কূটনীতিকেরাছবি: এএফপি

সিরিয়ায় ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর দামেস্ক শহর ঘিরতে শুরু করার দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এ পরিস্থিতিতে সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া, ইরান, কাতার ও তুরস্ক। সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে কাতারের দোহায় আজ শনিবার আলোচনায় বসেছিলেন ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকেরা।

দোহায় বৈঠকের পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, পক্ষগুলো সিরীয় সরকার এবং বৈধ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ শুরুর বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

উল্লেখ্য, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট। অন্যদিকে সিরিয়ার সরকার বাশার আল-আসাদের বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে আসছে রাশিয়া ও ইরান। সিরিয়ায় রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে এ তিন দেশ ২০১৭ সাল থেকে আলোচনা চালিয়ে আসছে। সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে কাতার বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছে। এখন তারা এ সংঘর্ষ থামাতে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে গত বুধবার থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আকস্মিক হামলা চালিয়ে বাশারের বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। গত ২৭ নভেম্বর হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সরকারি বাহিনীর ওপর আকস্মিক হামলা শুরু করে। আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠন থেকে বের হয়ে এইচটিএস গঠিত হয়। এইচটিএসের নেতৃত্বে ঘটনার আকস্মিকতায় দৃশ্যত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সরকারি বাহিনী। বিদ্রোহীরা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নেয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার মধ্যাঞ্চলীয় হামা শহর থেকে পিছু হটে সরকারি বাহিনী। এর পর থেকে একে একে অন্য শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে আসাদের সরকারি বাহিনী। এর আগে যুদ্ধে বাশার আল-আসাদের বাহিনী এত অল্প সময়ের মধ্যে এত গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায়নি।

আজ শনিবার বিদ্রোহী জোটের এক কমান্ডার বলেন, তাঁরা নতুন করে হামলা শুরু করেছেন। তাঁদের বিদ্রোহী সদস্যরা রাজধানী দামেস্ককে ঘিরে ফেলতে চূড়ান্ত পর্যায় শুরু করেছে। বিদ্রোহী বাহিনীর আক্রমণে সিরিয়ার সেনারা পালাতে শুরু করেছেন। অনেকেই পালিয়ে ইরাকে আশ্রয় নিচ্ছেন।

এর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেন, স্থানীয় বিদ্রোহী যোদ্ধারা এখন দারা প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী জোটের নেতৃত্ব দেওয়া কমান্ডার আবদেল ঘানি বলেন, ‘রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণ প্রবেশপথ থেকে আমরা ২০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে রয়েছি।’

এদিকে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দামেস্কের কাছ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে যে খবর এসেছে, সেসব দাবির কোনো ভিত্তি নেই।

দোহায় বৈঠক শুরুর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, তুর্কি প্রতিপক্ষ এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে খুব খোলামেলা এবং সরাসরি কথা বলেছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এর আগের সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট আসাদকে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করে লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানান।

বিদ্রোহীদের লক্ষ্য দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করাই তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।