২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

তুরস্কে লুটপাটের ভয়ে দোকানিরা খালি করছেন দোকান

কখনো কখনো তাপমাত্রা নেমে আসছে হিমাঙ্কের নিচে। তীব্র শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাচ্ছেন ভূমিকম্পের ফলে গৃহহীন মানুষেরা। গতকাল তুরস্কের কাহরামানমারাসে
ছবি: রয়টার্স

তুরস্কে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাগুলোয় একদিকে চলছে উদ্ধারকাজ, অন্যদিকে শুরু হয়েছে লুটপাটের ঘটনা। অভিযুক্ত হিসেবে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরও থামছে না লুটপাট। লুটেরাদের ভয়ে দোকান থেকে মালপত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন দোকানিরা।

তুরস্কের মধ্যাঞ্চলীয় আন্তাকায়া শহরে এ ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার দোকানিরা নিজেদের দোকান খালি করতে শুরু করেছেন। মালপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অন্যত্র। তাঁদের ভাষ্য, এমনটা করা হচ্ছে লুটেরাদের ভয়ে। শহরটিতে ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান রয়েছে ইউকজেল উজুনের। ভূমিকম্পের পরে তাঁর দোকানে লুটপাট হয়েছে।

আরও পড়ুন

লুটপাটের পর বাকি জিনিস দুটি ট্রাকে করে সরিয়ে নেন উজুন। এ সময় তিনি বলেন, ‘লুটেরারা দোকানে ঢুকে হাতের কাছে যা পেয়েছেন, সব নিয়ে গেছেন। এখন চার্জার, মুঠোফোনের কভারসহ রয়ে যাওয়া জিনিস নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছি।’ তিনি জানান, আপাতত তিনি শহরের বাইরে দোকান চালাবেন।

শুধু ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে নয়, ভূমিকম্পের পরে মুদি, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট হয়েছে। উজুন বলেন, ‘সবখানে লুটপাট হয়েছে। রাস্তার পাশের ছোট দোকান থেকে সুপার মার্কেটের জুতার দোকান—কিছুই বাদ যায়নি। আমি একটি ওষুধের দোকানে তালা ভেঙে লুটেরাদের ঢুকতে দেখেছি।’

উজুন আরও জানান, গতকাল রোববার থেকে শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের পর কয়েক দিন তাঁদের সংখ্যা বেশ কম ছিল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লুটপাট করা হয়েছে।

স্থানীয় একটি দোকানের ব্যবস্থাপক বেরকান ইয়োগুরতোগলু বলেন, ভূমিকম্পের পর জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে কয়েক দিন সময় লেগে গিয়েছিল। এই সময় মানুষ আশপাশের বিভিন্ন দোকানে লুটপাট চালায়। কেননা, তখন মানুষের জরুরি পণ্যের প্রয়োজন ছিল।

আরও পড়ুন

বেরকান আরও বলেন, ‘ভূমিকম্পের পরপরই আমি নিজেও পাশের একটি সুপার মার্কেটে ঢুকে তালা ভেঙে ডায়াপার নিয়ে এসেছি। তখন আমার বাচ্চার জন্য ডায়াপারের খুব প্রয়োজন ছিল।’

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ তুরস্কের বাসিন্দা। দেশটির ভূকম্পনপীড়িত ১০টি অঞ্চলে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন আটটি অঞ্চল থেকে লুটপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৮ জন।

আরও পড়ুন

ভূকম্পনপীড়িত এলাকাগুলোয় যথাসময়ে যথেষ্ট ত্রাণ না পৌঁছানোয় খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ভূমিকম্পে যাঁরা বেঁচে গেছেন, তাঁদেরও অনেকে মারা যেতে পারেন আশ্রয়, খাবার, সুপেয় পানি ও জ্বালানির অভাবে।

তুরস্কের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন—এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি। আর সিরিয়ায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক এল-মোস্তাফা বেনলামিল জানিয়েছেন, দেশটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক কোটির বেশি মানুষ।

আরও পড়ুন