সন্তানদের মরদেহ যাতে চিনতে পারি...
গাজার বাসিন্দা আলী এল দাবা ও লিনা দম্পতির সাত সন্তান। ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলার মুখে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে পরিবারটি। তবে বাড়ি ছাড়ার আগে আলী সিদ্ধান্ত নেন, যেখানেই যাবেন একসঙ্গে থাকবেন না সবাই। কারণ, একসঙ্গে থাকলে এক হামলায় সবার মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে যায়। দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ স্ত্রী লিনাকে গাজার উত্তরাঞ্চলে পাঠিয়েছেন আলী। তিন সন্তানসহ তিনি আছেন গাজার দক্ষিণের খান ইউনিসে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে।।
আলী তাঁর সঙ্গে থাকা সন্তানদের হাতের কবজিতে বেঁধে দিয়েছেন হালকা বেগুনি ও কালো রঙের মোটা সুতা। তিনি এভাবে সন্তানদের সাজাচ্ছেন, বিষয়টি এমন নয়। ইসরায়েলি হামলায় কিছু হয়ে গেলে যেন সন্তানদের চিনতে পারেন, সে জন্য তিনি এমনটা করেছেন।
আলী বলেন, ‘যদি কিছু হয়ে যায়, সে জন্য এমনটা করেছি। আমি অনেক লাশ ছিন্নভিন্ন হতে দেখেছি। যদি তারাও (সন্তানেরা) এভাবে টুকরা টুকরা হয়ে যায়, তাহলে আমি তাদের হাতে থাকা এই রঙিন মোটা সুতা দেখে চিনতে পারব।’
যেকোনো সময় সন্তানদের হারাতে হতে পারে, এমন আতঙ্কে ভুগছেন অভিভাবকেরা। হাতে রঙিন মোটা সুতা বাঁধা তারই একটি লক্ষণ। এর আগেও দেখা গেছে, অনেক মা–বাবা সন্তানের পায়ে নাম লিখে রাখছেন।
অতিসম্প্রতি গাজার একটি হাসপাতালের মর্গে কয়েকটি শিশুর মরদেহ পড়ে ছিল। তাদের পায়ের দিক থেকে প্যান্ট ওপরের দিকে তুলে দেখা হচ্ছিল, পায়ে কোনো নাম লেখা আছে কি না।
চিকিৎসকেরা জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এমন কিছু শিশুর মরদেহ এসেছে, যাদের চেনা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আহত অবস্থায় অনেক শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়, যাদের সঙ্গে পরিবারের কেউ থাকেন না। তাই তাদের পরিচয়ও পাওয়া যায় না।
কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে শিশুদের নামের জায়গায় নম্বর লিখেছে। গত সপ্তাহে গাজা সিটির শিফা হাসপাতালে দেখা গেছে এই নম্বর তিন অঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ বুধবার বিকেলে জানায়, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৭৫৬ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৪৪ জনই শিশু। এ নিয়ে গাজায় ৭ অক্টোবর থেকে চলা ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬ হাজার ৫৪৬ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু ২ হাজার ৭০৪ জন এবং নারী ১ হাজার ৫৮৪ জন। এ ছাড়া এসব হামলার ঘটনায় আহত হয়েছে ১৭ হাজার ৪৩৯ জন।