হামলার সিদ্ধান্তে অটল ইরান
ইসরায়েলে হামলা থেকে পিছু হটতে পাঁচ বিশ্বনেতার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান ইরানের। বলেছে, এতে রাজনৈতিক যুক্তি নেই।
ইসরায়েলে হামলা থেকে পিছু হটতে বলার পশ্চিমা আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তাঁর শপথ গ্রহণের দিনই তেহরানে অতিথি হয়ে আসা হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হত্যার জবাব দেওয়ার অধিকার তাঁর দেশের রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের নেতারা ইরানকে পিছু হটতে বলার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে রাজনৈতিক যুক্তির অভাব রয়েছে এবং তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গত সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান। ইউরোপীয় নেতারা হামাসের হাতে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার ও গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দূর করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তাঁরা ইরান ও তার মিত্রদের ইসরায়েলে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে বলেন। তাঁদের মতে, এতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যাবে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তেহরানকে হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
হোয়াইট হাউস সতর্ক করে বলেছে, ইরান ও তাদের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দ্রুতই ইসরায়েলে ‘উল্লেখযোগ্য হামলা’ চালাতে পারে। একই ধারণা পোষণ করে ইসরায়েল।
গত ৩১ জুলাই হামাসপ্রধান হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, তেহরানে তিনি যে অতিথিশালায় অবস্থান করছিলেন, সেখানে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়া তেহরানে গিয়েছিলেন। তাঁর নিহত হওয়ার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে বৈরুতে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরায়েল। পরপর এ দুই নেতাকে হত্যায় প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান ও তার মিত্র হিজবুল্লাহ।
এদিকে ওই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের পক্ষে নিজেদের সমর্থন দেখাতে দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ডুবোজাহাজ ও বিমানবাহী রণতরি ওই অঞ্চলে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে বলেছেন, গত জুলাই মাসে হানিয়াকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়াকে অধিকার বলে মনে করে ইরান। ভবিষ্যতে ইসরায়েলি আগ্রাসনকে নিরুৎসাহিত করতে এটাই সঠিক পথ। ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, গত সোমবার স্টারমারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন পেজেশকিয়ান।
প্রতিশোধ ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি ইসরায়েলের
ইরানের হুমকির মুখে প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। টাইমস অব ইসরায়েল-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান যদি ইসরায়েলে হামলা চালায়, তবে ইসরায়েলও পাল্টা হামলা চালাবে ইরানে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের এ কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের হামলায় যদি ক্ষয়ক্ষতি না হয়, তবু পাল্টা হামলা দিয়েই এর জবাব দিতে চায় ইসরায়েল। এদিকে ইসরায়েলকে রক্ষায় পরিপূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গোয়েন্দারা সতর্ক করে বলেছেন, শিগগিরই ইরান ও তার মদদপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হামলা চালাতে পারে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই হামলা ঘটনা ঘটতে পারে। ইসরায়েলের পাল্টা হামলার ব্যাপক প্রস্তুতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এ সতর্কতা জারি করল।
হিজবুল্লাহর হামলা
ইসরায়েল দাবি করেছে, গতকাল লেবানন থেকে ইসরায়েলে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। তাদের আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ওই হামলা প্রতিহত করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রতিবেশী লেবাননে টহল বাড়িয়েছে এবং প্রতিদিন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি হিজবুল্লাহর আবাসস্থল লেবাননে বিমান টহল বৃদ্ধি এবং হুমকি অপসারণের লক্ষ্যে চলমান হামলার ঘোষণা দিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েল ও হামাসকে বৃহস্পতিবার আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা হামাসকে আলোচনায় টেবিলে ফেরার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে।