পশ্চিম তীরে দুই দিনে সাংবাদিকসহ চার ফিলিস্তিনি নিহত
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে দুই দিনে চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গত বুধবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব প্রাণহানি হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে এক কিশোর, নারী সাংবাদিকও আছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে আল–জাজিরা।
ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তথ্য অনুসারে, রামাল্লা শহরের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ১৭ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সংস্থাটির বরাতে ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যম মান নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত কিশোরের নাম ওদে মোহাম্মদ ওদে। বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রামাল্লার প্যালেস্টাইন মেডিকেল কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সে। রামাল্লার পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রাম আল মিদিয়ায় তাকে গুলি করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
গতকাল রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, ‘চিকিৎসকেরা তার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তবে শরীরে অত্যন্ত গুরুতর আঘাত থাকার কারণে সে মারা গেছে।’ গত বুধবার সকালে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ৩১ বছর বয়সী নারী সাংবাদিক গুফরান ওয়ারাসনেহ। অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে অবস্থিত আরুব শরণার্থীশিবিরের প্রবেশমুখে তাঁকে গুলি করা হয়। এটি ছিল একটি রেডিও স্টেশনে তাঁর নতুন চাকরির তৃতীয় দিন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তাঁর কাছে একটি ছুরি ছিল এবং এটি দিয়ে তিনি সেনাদের আঘাতের চেষ্টা করেছিলেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা আল–জাজিরাকে বলেছেন, ওয়ারাসনেহ খুব সামান্যই হুমকি তৈরি করেছিলেন।
গত দুই দিনে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত চতুর্থ ফিলিস্তিনি ওদে।গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার আগে বেথলেহেম শহরের ধেইশে শরণার্থীশিবিরে অভিযান চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই অভিযানে ২৯ বছর বয়সী আয়মান মাহমুদ মোহাইসেন নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের কারাবন্দীদের অধিকার রক্ষার পক্ষের সংগঠনগুলো বলছে, তিন সন্তানের বাবা মোহাইসেন সাবেক কারাবন্দী। তিনি ইসরায়েলের কারাগারে তিন বছর বন্দী ছিলেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর আলাদা আরেকটি অভিযানে ২৪ বছর বয়সী বিলাল আওয়াদ কাবাহা নিহত হয়েছেন। গত বুধবার রাতে উত্তরাঞ্চলীয় পশ্চিম তীরের ইয়াবাদ শহরের কাছে এ অভিযান চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় কাবাহাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
গত ২৯ মার্চ তেল আবিবের কাছে বিনেই ব্রাক শহরে বন্দুক হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন দিয়া হামারশেহর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই হামলার ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন। ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে হামারশেহও ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
বুধবার হামারশেহর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর তাঁর ৫৯ বছর বয়সী বাবা আহমদকেও গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। ওয়ারাসনে হলেন এক মাসের কম সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি।
গত ১১ মে জেনিনে আল–জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে মোট ৬১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।