কীভাবে সিরিয়া এমন হলো
জাতিগত দ্বন্দ্ব আর আন্তর্জাতিক কূটচালে পড়ে একটি দেশ কীভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তা সিরিয়ার অবস্থা না দেখলে বোঝা যায় না। সাত বছর ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেনের পথ ধরে সিরিয়ায় রক্ত ঝরছে। এ যেন রক্তের স্রোতোধারা, না থেমে বাড়ছে দিন দিন। বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের আহাজারিতে বিশ্ব মানবাধিকার যেন মুখে যেন কুলুপ এঁটে আছে।
কিন্তু কিছু সময়ের জন্য সিরিয়ার শিশু আয়লান কুর্দির নিষ্প্রাণ শরীর তুরস্কের সৈকতে পড়ে থাকতে দেখে বিশ্ববিবেক প্রচণ্ডভাবে নড়ে উঠেছিল। আয়লানের ছোট নিথর দেহের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই ঘুম ভাঙে বিশ্ববাসীর। কিন্তু এখনো যে বিশ্বের দাবার ঘুঁটির নড়াচড়ায় আয়লানরা গুরুত্বহীন, তা সিরিয়া যুদ্ধই প্রমাণ করে। প্রতিদিন নাম না-জানা আয়লান কুর্দিদের চলে যেতে হচ্ছে এর কবলে পড়ে।
এর শুরুটা দীর্ঘ সাত বছর আগে। এ গৃহযুদ্ধে লাখ লাখ লোক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচ লাখ। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ।
সংকটের শুরু যেভাবে
২০১১ সালে বিশ্বে আরব বসন্তের আগমন। তিউনিসিয়া টালমাটাল। এর ধারায় পরে যোগ দেয় মিসর, লিবিয়া। অনেকে মনে করেছিলেন, সিরিয়ায় হয়তো আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না। কেননা দেশটিতে গত ৪০ বছর ধরে নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলেছেন বাসার আল-আসাদের বাথ পার্টি। এ ছাড়া বাশার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কায়েমে অনেক সুন্নি মুসলিমেরও সমর্থন ছিল। কিন্তু সিরিয়ায় গল্পটির শুরু একটু ভিন্নভাবে।
ছোট ঘটনা থেকে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে। ২০১১ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময় সরকারবিরোধী গ্রাফিতির কারণে চারজনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে সরকারি বাহিনী। দেশটির ডেরা শহরের এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে সরকারি বাহিনী ব্যাপকভাবে গুলি ছোড়ে। কয়েকজন বিক্ষোভকারী মারা যান। সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে।
বাশার আল-আসাদ ট্যাংক, আর্টিলারি এবং হেলিকপ্টার গানশিপ সহকারে দেশব্যাপী অপারেশন চালায়। মাত্র তিন মাসে ২০১১ সালের জুলাই নাগাদ প্রায় ১৬ হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হন।
এরপরের ঘটনাপ্রবাহ এতই জটিল, সঠিক হিসাব রাখা মুশকিল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, শহর দখল, দখল থেকে মুক্ত, আবার পুনর্দখলের মধ্য দিয়ে সাত বছর চলে গেল। এতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। তালিকায় আছেন নিরীহ জনগণ, সেনাসদস্য, বিদ্রোহী এবং সরকারি সমর্থকেরাও।
পশ্চিমারা আসাদকে হটিয়ে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’-এর জন্য মাঠে নামে। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে অগোছালো থাকলেও ধীরে ধীরে বাইরের সমর্থনে সংগঠিত হয়। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নানান পক্ষ আর উপলক্ষ থাকলেও বিদ্রোহীরা একত্র হয়ে একটি সংগঠিত ফোর্স গঠন করেছে। এর নাম দিয়েছে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। এরপর থেকে লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, ২০১২ সালে ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শরণার্থী হয়েছে পাঁচ লাখের মতো।
সিরিয়ার জাতিগোষ্ঠী
রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের এক পক্ষে রয়েছে সিরিয়ায় ৪০ বছর ধরে শাসনকারী আলওয়াইটস গোত্রের নেতৃত্বে বাথ পার্টি এবং তাদের সমমনারা। অন্যদিকে আছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা, যাদের মধ্যে আছে সিরিয়ার ৬০ শতাংশ সুন্নি জনগোষ্ঠী এবং তাদের সমমনারা।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে রাশিয়া, ইরান সব বিষয়ে বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষে থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র বা তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা বিপক্ষে। জাতিসংঘে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সব প্রস্তাবের ভেটো দিয়েছে এরা। আর আরব লিগ শুরু থেকেই দোটানা অবস্থায়।
সিরিয়ার নাগরিকদের মধ্যে ৬৯ শতাংশ সুন্নি। এর মধ্যে কুর্দি ৯ শতাংশ ও বাকিরা আরবীয়। ১২ দশমিক ৮ শতাংশ আলওয়াইটস আরব, ১৩ শতাংশ ক্রিশ্চিয়ান, যাদের মধ্যে ৯ শতাংশ অর্থোডক্স এবং ৪ শতাংশ আর্মেনিয়ান, দ্রুজ আরব ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং ইসমাইলি শিয়া ৩ শতাংশ।
আলাউই গোত্রকে ফ্রান্সের শাসকদের ডাকা উচ্চারিত অপভ্রংশ থেকে আলওয়াইটস নামটা এসেছে। আগে এদের নুসায়রি বলেই বেশি ডাকা হতো। নুসায়রি শব্দটি থেকে আলাউই শব্দটি বেশি গ্রহণযোগ্য। কারণ, আলওয়াইটস শব্দটার অর্থ হচ্ছে হজরত আলীর অনুসারী।
ফ্রি সিরিয়ান আর্মি গঠন (এফএসএ)
বাশার সরকার পতনের লক্ষ্যে ২০১১ সালের জুলাইয়ে সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহীরা ফ্রি সিরিয়ান আর্মি গঠনের ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার মধ্য দিয়েই সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই সশস্ত্র সংঘাত ভয়ংকর রূপ নেয়।
১৯৮২ সালে বাশারের বাবা হাফিজ আল আসাদ মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর সামরিক অভিযানের আদেশ দিয়েছিলেন। হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়। আর এর জেরে ব্রাদারহুডের কর্মীরাও ফ্রি সিরিয়ান আর্মিতে যোগ দেন।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ায় সামরিক বাহিনী আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বড় একটি জয় পায়। এরপর থেকে এফএসএর নিয়ন্ত্রণ এলাকার সংখ্যা কমতে শুরু করে। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি সফল না হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, এরা একটি দল হয়েছে মাত্র, কিন্তু সত্যিকারের সেনাবাহিনীর হতে পারেনি।
রাশিয়া, আমেরিকা ও মিত্রদের হস্তক্ষেপ
প্রথমে শুধু হালকা অস্ত্র এবং মর্টার বা এ ধরনের অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করলেও ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ফ্রি সিরিয়ান আর্মি তুরস্ক থেকে সরাসরি মদদ পায়। ২০১১ সালের অক্টোবরে সরকারি সেনার ওপর ট্যাংক এবং হেলিকপ্টার সহযোগে প্রথম হামলা চালায় কোম শহর দখল করার জন্য। এরপর থেকে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি দেশের অনেক অংশ দখল করে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদেশিদের নগ্ন হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। ২০১৫ সালে দৃশ্যপটে রাশিয়ার সরব উপস্থিতি। শিয়া ইরান ও ইরাক সরকার এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ বাশার আল-আসাদকে সমর্থন-সহযোগিতা করছে। অন্যদিকে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ তুরস্ক, কাতার এবং সৌদি আরব আসাদবিরোধীদের সমর্থন ও সহযোগিতা করে আসছে।
২০১৬ সাল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামিক স্টেট (আইএস) সিরিয়ার পাকাপোক্তভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসে। একের পর এক হামলায় জেরবার করে সিরিয়ার সরকারকে।
যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই অস্ত্র দিয়ে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করে আসছে। ২০১৪ সালে তারা আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে। বিশ্লেষকেরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আইএস প্রতিষ্ঠা করে সিরিয়ায় নিজেদের প্রবেশ নিশ্চিত করে।
এরই মধ্যে ইসরায়েল সিরিয়ায় বোমা হামলা চালায়। পক্ষান্তরে সিরিয়ান সেনাবাহিনী ইসরায়েলের বিমান ভূপাতিত করে।
‘সত্য জানার অধিকার তোমার আছে, আর সত্যই তোমাকে মুক্ত করবে’—এ আদর্শ নিয়ে ১৯৪৭ সালে যাত্রা শুরু করা আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ২০১৩ সালে আসাদবিরোধীদের অস্ত্র, তহবিল ও প্রশিক্ষণের জন্য গোপন কর্মসূচি চালু করে। কর্মসূচির খবর ফাঁস হয়ে হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় এর কার্যক্রম। তখন শোনা গিয়েছিল, সিআইএ ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সিরিয়ায় ফ্রি সিরিয়ান আর্মি ও আইএসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে। এদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা শুরু করে। আসাদের জন্য সামরিক উপদেষ্টাও নিয়োগ করে রাশিয়া।
শান্তি আলোচনা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশি সময় ধরে চলছে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ। যুদ্ধবিরতি এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু থেকেই চলছে।
জেনেভা
২০১২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী প্রতিনিধিদের মধ্যে জাতিসংঘের আলোচনার প্রথম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। পরিবর্তনশীল সরকারে আসাদের ভূমিকা নিয়ে একমত হতে না পারায় আলোচনা ব্যর্থ হয়।
আস্তানা
রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক সিরিয়ায় নিরাপদ অঞ্চল তৈরির ব্যাপারে ২০১৭ সালের মে মাসে একমত হয়।
সোচি
কৃষ্ণসাগরের সোচিতে এ বছরের জানুয়ারিতে সিরিয়া সরকার শান্তি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিদ্রোহীরা সেই আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে।
মৃত্যু, লাখো শরণার্থী বিদেশে
দীর্ঘ সময় ধরা চলা যুদ্ধের কারণে মানুষ সিরিয়া ছেড়ে চলে যায়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) হিসেবে আনুমানিক ১০ মিলিয়ন মানুষ সিরিয়া ছেড়ে গেছে।
লেবানন, জার্মানি, ইরান ও তুরস্ক সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়। তাদের অনেকে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে আরও ভালো সুবিধা পাওয়ার জন্য। তবে ২০১৭ সালে ৬৬ হাজার শরণার্থী আবার নিজভূমে ফিরে আসে।
সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র হামলার অভিযোগের মধ্যই বিশ্বে বাড়তে থাকে শরণার্থী ও মৃতের সংখ্যা। ২০১৪ সালে ৭৬ হাজার প্রাণ যায়। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৫ হাজারে। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে বলা হয় এ সংখ্যা লাখ পেরিয়েছে।
যুদ্ধের নাটকীয় মোড়
সিরিয়া যুদ্ধের নাটকীয় পরিবর্তনের শুরু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। রাশিয়া সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ওপর সরাসরি বিমান থেকে বোমাবর্ষণ শুরু করে। তখন থেকে বিদ্রোহীদের ওপর এখনো চলছে রুশ বাহিনীর বিমান হামলা। রুশদের সহায়তায় একে একে দামেস্কের বড় অংশ ও আলেপ্পো শহরে নিজেদের হারানো নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় বাশারের সেনারা।
২০১৫ সালের দিকে রাশিয়ার কাছে সিরিয়াই ছিল মধ্যপ্রাচ্যে ভালোভাবে পা রাখার একমাত্র স্থান। সেটি তারা হারতে চাইছিল না। আবার ইরান মনে করেছিল, সিরিয়ার পতন ঘটলে, সে মিত্র হারাবে। এই প্রেক্ষাপটে ইরান ও রাশিয়ার সরাসরি অংশগ্রহণের ফলে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক ও সৌদি আরব-সমর্থিত বিদ্রোহীরা বেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। এই গত ডিসেম্বরে আলেপ্পোর পতন মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের জন্য ভয়ংকর আঘাত।
একসময় সব পক্ষই বুঝতে পেরেছে, সামরিকভাবে সিরিয়া সংকটের সমাধান হবে না। সমাধান করতে হবে আলোচনার টেবিলে বসে। কিন্তু শান্তি আলোচনার ভিত্তি কী হবে? আরব বসন্তের শুরুতে আসাদ ছিলেন কোণঠাসা। যেকোনো মুহূর্তে পতনের ধারণাও সৃষ্টি হয়েছিল। কেটে পড়তেও প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তখনবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তা না মেনে চেয়েছিলেন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু ইরান, রাশিয়া এবং হিজবুল্লাহর দাবার চাল ওবামাদের হিসাব পাল্টে দেয়। যতই দিন গেছে, আসাদের শক্তি বেড়েছে। এখন অবস্থান বেশ শক্ত।
রাশিয়াও তার ঘাঁটির সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না। যুদ্ধের মধ্যেই আসাদ সরকারের সঙ্গে তারা চুক্তি করছে। ইরান তার প্রভাব বৃদ্ধির প্রক্রিয়াতে সচেষ্ট। অন্যদিকে তুরস্কও সিরিয়ার দিকে নজর দিয়েছে। তবে যুদ্ধের শুরুতে তুরস্ক ছিল প্রচণ্ডভাবে রুশবিরোধী। কিন্তু এখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তুরস্কের এরদোয়ানের চমৎকার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ বোঝাপড়া সিরিয়া যুদ্ধের মোড় ঘোরানোর অন্যতম কারণ।
সর্বশেষ পরিস্থিতি
বাশার আল-আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র হামলার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার রাতে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, হামলায় তিনটি দেশই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র ব্যবহার করেছে। লোহিত সাগরে অবস্থান করা মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বি-১ ল্যান্সার বোমারু উড়োজাহাজও ব্যবহার করেছে। পেন্টাগনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিরিয়ার তিনটি স্থানকে লক্ষ্য করে মোট ১০৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে ৫৯টি টমাহক মিসাইল। এ ছাড়া বি-১ ল্যান্সার বোমারু উড়োজাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা হয় ১৯টি স্ট্যান্ডঅফ মিসাইল।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সিরিয়ায় তিন দেশের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় বেশির ভাগ মিত্রদেশের সমর্থন পেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইরের বিশ্বের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। তবে নিজেদের অঞ্চলে এ হামলা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আরব বিশ্ব। সম্মেলনে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ওই অঞ্চলে ইরানের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ তীব্র নিন্দা জানান।
সৌদি আরব ও তার মিত্ররা সিরিয়ায় হামলার ঘটনাকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে ইরাক ও লেবানন এর নিন্দা জানিয়েছে। আরব বিশ্বের বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ন্যাটোসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাও সিরিয়ার হামলাকে সমর্থন করেছে।
তবে সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া বলেছে, সিরিয়ার বৈধ সরকারকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাদের সহায়তার সময় এ হামলা খুবই নিন্দনীয়।
সিরিয়ার দুমায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো ওই হামলার জন্য সিরিয়া ও তার মিত্র রাশিয়াকে দায়ী করে আসছে। সিরিয়াকে ঘিরে কেউ কেউ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাও করছেন। তবে এ আশঙ্কা সত্যে পরিণত হবে না বলেই মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া দুই পক্ষই জানে, যুদ্ধের পরিণতি হবে ভয়াবহ। ফলে সরাসরি যুদ্ধ না বাধিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের কায়েমি স্বার্থ জিইয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সহযোগীদের দিয়ে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।
*দ্যা আটলান্টিক, বিবিসি ও আল জাজিরা অবলম্বনে