ন্যাটো সম্মেলনে কিয়েভের জন্য ‘ইতিবাচক বার্তা’

ইউক্রেনকে এখনই ন্যাটোর সদস্য করা নিয়ে সামরিক এই জোটের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে।

ন্যাটোর দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাদের ফটোসেশন। গতকাল লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন গতকাল মঙ্গলবার লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে শুরু হয়েছে। দুই দিনের এই সম্মেলনে গুরুত্ব পাচ্ছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা জোরদার ও দেশটিকে ন্যাটোর সদস্যপদ প্রদান। যদিও ইউক্রেনকে সদস্য করা নিয়ে সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি রয়েছে।

সদস্য হওয়ার বিষয়ে এই সম্মেলন থেকে আপাতত ‘ইতিবাচক বার্তা’ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ইউক্রেনকে। এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ। যদিও সদস্যপদের বিষয়ে সম্মেলন থেকে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষিত না হওয়াকে ‘অযৌক্তিক’ মনে করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

এদিকে সম্মেলনে যোগ দিতে ইতিমধ্যে ভিলনিয়াসে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁসহ ন্যাটোর প্রভাবশালী নেতারা। বিশেষ আমন্ত্রণে গতকাল ভিলনিয়াসে পৌঁছান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও।

‘ইতিবাচক বার্তা’ পাবে ইউক্রেন

ইউক্রেনকে এখনই ন্যাটোর সদস্য করা নিয়ে ৩১ সদস্যের এই জোটের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। ফলে দেশটির এই সামরিক জোটে যোগদানের বিষয়ে নির্দিষ্ট তারিখ কিংবা দেশটিকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি গতকাল শুরু হওয়া এই সম্মেলনে হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে ন্যাটোপ্রধান বলেছেন, কিয়েভ আরও সামরিক সহায়তা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে। তাদের জোটে যোগদানের আনুষ্ঠানিক শর্তও শিথিল করা হবে। পাশাপাশি ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিলের মতো সহযোগিতার নতুন আদলও গঠিত হবে।

সম্মেলনে পৌঁছে স্টোলটেনবার্গ বলেন, ‘ইউক্রেনের সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে মিত্ররা স্পষ্ট, ঐক্যবদ্ধ ও ইতিবাচক বার্তা দেবেন বলে আমি আশা করছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানও একই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ন্যাটোর সদস্য হতে ইউক্রেনের আবেদনের বিষয়ে সম্মেলন থেকে ‘ইতিবাচক বার্তা’ দেওয়া হবে। চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছাতে কূটনীতিকেরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নির্দিষ্ট সময়সীমা চান জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ন্যাটোর এই সম্মেলন থেকে যদি ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা না হয়, সেটা হবে ‘অযৌক্তিক’। সম্মেলনে যোগ দিতে ভিলনিয়াসের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। সদস্যপদের বিষয়ে ন্যাটো মিত্রদের পক্ষ থেকে দুর্বল বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন জেলেনস্কি।

অচিরেই সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা কম

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের অচিরেই ন্যাটোর সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দপ্তরের কৌশলগত যোগাযোগসংক্রান্ত জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের সমন্বয়ক জন কিরবির বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

জন কিরবি বলেন, ‘আমরা মনে করি ন্যাটোতেই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ। আমি যেটা বোঝাতে চাচ্ছি, এ বিষয়ে জোটের সদস্যরা ২০০৮ সালেই একমত হয়েছেন। এখন দেশটির কিছু সংস্কারের প্রয়োজন হবে—সুশাসন, আইনের শাসন ও রাজনৈতিক সংস্কার। এসব বিষয়ে ইউক্রেনকে কাজ করতে হবে।’

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা জন কিরবি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, আপনি যখন যুদ্ধের মধ্যে থাকবেন, এ ধরনের কিছু সংস্কারের বিষয়ে কাজ করাটা কঠিন। তারা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছে। তাই অদূর ভবিষ্যতে তাদের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এটি ন্যাটোকে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে পারে।’

মন বদলালেন এরদোয়ান

ন্যাটোতে সুইডেনের সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ায় বছরখানেক ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছিল তুরস্ক। অবশেষে এই আপত্তি তুলে নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত সোমবার বলেছেন, সুইডেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আপত্তি নেই তাঁর।