২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসছে

জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন (বাঁ থেকে) ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। আজ শুক্রবার জাপানের মিয়াজিয়া দ্বীপে
ছবি: এএফপি

রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ানো এবং বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়নে একমত হয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭। পাশাপাশি ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তারও অঙ্গীকার করেছেন জোটের নেতারা।

আজ শুক্রবার শুরু হওয়া জাপানের হিরোশিমা শহরে জোটের শীর্ষ সম্মেলনে এসব বিষয়ে মতৈক্য হয়। এই সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও।

সম্মেলনে জোটের নেতারা নিজেদের দেশের ও চীনের অর্থনীতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান টানাপোড়েনের বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামীকাল রোববার পর্যন্ত এ সম্মেলন চলবে। ওই দিন জেলেনস্কি সশরীর উপস্থিত থাকতে পারেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ

এক যৌথ বিবৃতিতে জি-৭ নেতারা বলেন, রাশিয়ার ওপর আরোপিত বিদ্যমান বিধিনিষেধগুলোর পরিধি আরও বাড়ানো হবে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে দেশটির ১৫ মাসের যুদ্ধে সহায়তা করতে পারে, এমন যেকোনো রপ্তানি জি-৭ জোটের দেশগুলোতে নিষিদ্ধ থাকবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিবৃতিতে বলা হয়, এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে শিল্প–যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা রাশিয়া তার যুদ্ধসক্ষমতা পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহার করে থাকে। পাশাপাশি ধাতু ও হীরার বাণিজ্য থেকে রাশিয়ার রাজস্ব আয়ের লাগাম টেনে ধরার প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকবে।

বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ফাঁকি দিয়ে দুর্বল করা হচ্ছে এমন তথ্য-প্রমাণ বিষয়ে জোটের নেতারা বলেন, জোটটি এমন দেশগুলোর সঙ্গে ‘কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে’, যেসব দেশের মাধ্যমে জি-৭–এর বিধিনিষেধ আরোপিত কোনো পণ্য, পরিষেবা বা প্রযুক্তি রাশিয়ায় যেতে পারে।

কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে জোটের নেতারা বলেন, ‘আমরা এই দেশগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো তুলে ধরছি এবং উৎসাহিত করছি, যাতে আমাদের নেওয়া ব্যবস্থাগুলো লঙ্ঘন করা না হয় এবং এর উদ্দেশ্য যাতে কার্যকর হয়।’

রাশিয়ার পণ্য রপ্তানি লক্ষ্য করে ঘোষিত নতুন নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ‘রাশিয়াকে যাতে মূল্য চুকাতে হয়’ তা নিশ্চিত করতে চান তিনি। বিবিসিকে সুনাক আরও বলেন, রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

জার্মানির কিছু বাণিজ্যিক নথিতে দেখা গেছে, রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে দেশটির রপ্তানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর এসব পণ্য ফের রপ্তানি হতে পারে এমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোটের পক্ষ থেকে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতি নিন্দার বিষয়টি দৃঢ়তার সঙ্গে পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে চলতি বছর এবং পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের জন্য আরও সামরিক সাহায্য এবং দেশটির যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির জন্য আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন জোটের নেতারা।

জি-৭ জোটের সদস্য দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা ও ইতালি। এ সম্মেলনে আরও আটটি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধি হিসেবে কমোরোস ও প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ফোরামের প্রতিনিধি হিসেবে কুক আইল্যান্ডস।

যোগ দিচ্ছেন জেলেনস্কি

সম্মেলনে জি-৭ নেতারা ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে নিজেদের কৌশল নিয়েও আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই যুদ্ধ স্তিমিত হওয়ার আদৌ কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। আগামীকাল রোববার জেলেনস্কি সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন বলে সম্মেলনসংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা জানান। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়া তাঁরা নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি ওলেক্সি দানিলভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, সম্মেলনে জেলেনস্কির উপস্থিতি আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ‘একান্ত অপরিহার্য’।

এদিকে আরব লিগ সম্মেলনে ভাষণ দিতে গতকাল সৌদি আরবের জেদ্দায় পৌঁছেছেন জেলেনস্কি। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে। সেখান থেকে ফ্রান্সের একটি সরকারি বিমানে তাঁর জাপানের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা হিরোশিমা আসন থেকে জাপানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি বলেন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই সম্মেলন আয়োজনের জন্য এই শহরকে বেছে নিয়েছেন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে প্রায় ৭৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করলে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর ধ্বংস হয়ে যায়। সম্মেলন শুরুর আগে পারমাণবিক হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের স্মরণে নির্মিত শান্তি স্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ জোটের নেতারা।

আরও পড়ুন