মানুষের মতো বানরও নাম ধরে ডাকে

ফ্রান্সের চিড়িয়াখানায় মায়ের সঙ্গে পিগমি মারমোসেটের বাচ্চারাছবি: এএফপি

দলবদ্ধভাবে বসবাস করা প্রাণীদের মধ্যে যাদের নামকরণ হয় এবং প্রত্যেকের আলাদা নাম থাকে, তাদের উচ্চ বুদ্ধিমত্তার প্রাণী বলে ভাবা হয়ে থাকে। এর আগে শুধু মানুষ, বোতল নাকের ডলফিন ও আফ্রিকার হাতিদের মধ্যে এটা দেখা যেত।

এবার এ দলে নতুন করে যোগ হয়েছে মারমোসেট বানর। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি সায়েন্স ম্যাগাজিনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এ গবেষণা চালান।

জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেভিড ওমর বলেন, ‘আমরা সামাজিক আচরণের বিষয়ে খুবই আগ্রহী। কারণ, আমরা মনে করি, অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষ যে বিশেষ, সেটা বোঝাতে সামাজিক আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দ্রুত দৌড়াতে পারি না, উড়তে পারি না, সামাজিক হওয়া ছাড়া অন্য কিছুতেই সেরা নই। একটি সমাজ হিসেবে আমাদের সব অর্জন আমাদের সামাজিক অর্জন।’

মানুষের মধ্যে সামাজিক আচরণ এবং ভাষার বিবর্তন নিয়ে গবেষণার জন্য মারমোসেট বানর আদর্শ বিষয় বলেও ব্যাখ্যা করেন এই গবেষক। কারণ, এদের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য অনেকটা মানুষের মতোই। ৮–১০ জনের পরিবারের ছোট ছোট দলে এরা বসবাস করে।

গাই ওরেন নামের একজন স্নাতক শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষকেরা কয়েক জোড়া মারমোসেট বানরকে পরস্পর থেকে আলাদা করে তাদের স্বাভাবিক কথোপকথন রেকর্ড করেন।

এ সময় তাদের পরস্পরের চোখের আড়ালে রাখা হয়েছিল। আগে রেকর্ড করা ডাক কম্পিউটারের মাধ্যমে আবার শুনিয়ে সেগুলোর প্রতিক্রিয়াও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষকেরা দেখেছেন, বানরগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে উচ্চ তরঙ্গের একধরনের শব্দ ব্যবহার করে। একই ডাক যখন আবার তাদের শোনানো হয়, তখন তারা সে ডাক চিনতেও পারে এবং সবচেয়ে বেশি সাড়া দেয় যখন তাদের নাম ধরে ডাকা হয়।

গবেষকেরা ১০টি মারমোসেট বানরের ওপর এ পরীক্ষা চালান। সেগুলোকে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পরিবার থেকে আনা হয়েছিল। তারা শুধু নাম ধরে ডাকতে পারে, তা–ই নয়; বরং প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা আলাদা আলাদা নাম ডাকতে একই ধরনের শব্দ করে। অন্য পরিবারের সদস্যরা আবার অন্য ধরনের শব্দ করে। যেমনটা একেক অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভাষার ভিন্নতা দেখা যায়।