১৩১ বাঙালি শ্রমিককে কাশ্মীর থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে
সম্প্রতি কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর কাশ্মীরে কর্মরত বাঙালি শ্রমিকদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বহু শ্রমিক ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আরজি জানিয়েছেন, তাঁদের যেন কাশ্মীর থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় বাংলায়।
কাশ্মীরের বাঙালি শ্রমিকদের এ ডাকে সাড়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেছেন, আর কাশ্মীরে রাখা হবে না এই রাজ্যের বাঙালি শ্রমিকদের।
কাশ্মীর থেকে বাঙালি শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথম পর্যায়ে কাশ্মীর থেকে ১৩১ জন বাঙালি শ্রমিককে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। ৯ জনকে ইতিমধ্যে কড়া নিরাপত্তায় বাসে করে নিয়ে আসা হয়েছে জম্মুতে। এখানে অন্যদের আনার পর একসঙ্গে একটি বিশেষ ট্রেনে করে আনা হবে বাংলায়।
নিহত পাঁচ শ্রমিকের দেহ তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন মমতা। মৃতদেহ আনার জন্য কাশ্মীরে পাঠিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে।
বাঙালি শ্রমিকদের এই রাজ্যে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের দুই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাকে কাশ্মীরে পাঠিয়েছেন। তাঁরা হলেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সঞ্জয় সিং এবং সিআইডির এসএসবি অনুপ যশপাল। গতকাল শুক্রবার সকালেই তাঁরা ছুটে গেছেন কাশ্মীরে।
রাজ্য সরকার নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ৫ লাখ রুপি করে আর্থিক সাহায্যের চেকও পৌঁছে দিয়েছে। রাজ্য সরকার বলেছে, আহত শ্রমিকদের বিনা খরচে চিকিৎসা করাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
মমতা বলেছেন, কাশ্মীরের এই শ্রমিক হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত।
কাশ্মীরে নিহত বাঙালিরা হলেন কামরুদ্দিন শেখ, মুর্শিনাম শেখ, রফিক আহমেদ শেখ, নইমুদ্দিন ও রফিকুল আলম। তাঁরা সবাই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার ব্রাহ্মণী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
কাজের সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাশ্মীরে এসেছিলেন ওই শ্রমিকেরা। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাঁও এলাকার কাটারসু গ্রামে। জঙ্গিরা এ সময় হঠাৎ ওই শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয়। জঙ্গিদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাঁরা। খবর পেয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরের ডিআইজির নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। সেখান থেকে পুলিশ এই পাঁচ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে।
রাজ্য পুলিশের ডিজি দিলবাগ সিং পাঁচ শ্রমিক হত্যার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ওই শ্রমিকেরা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করতে ওখানে এসেছিলেন। এই জঙ্গি হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে।
শুধু তাঁরাই নন, আরও বহু শ্রমিক রুটিরুজির তাগিদে কাশ্মীরে কাজ করেন। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে আপেল বাগানের পরিচর্যা, কাঠমিস্ত্রি, নির্মাণশিল্প এবং বিভিন্ন পশমশিল্পে কাজ করে আসছেন। তাঁদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা।