হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করার কথা বলে তোপে অমিত শাহ
বহু ভাষা ও মিশ্র সংস্কৃতির দেশ ভারতে হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করার কথা বলে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শাসক দল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। অমিত শাহর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্য ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষ। তাঁদের মধ্যে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে সভাপতি এম কে স্টালিন, কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী, পদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী, সিপিএমের নেতা মহম্মদ সেলিম প্রমুখ।
ভারতে ২৯টি রাজ্য ও ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ভাষাভাষীর ছড়াছড়ি। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় বাংলা ভাষার ব্যবহার বেশি। উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, দিল্লি, রাজস্থানে রয়েছে হিন্দি ভাষার আধিক্য। তামিলনাড়ুতে তামিল, কর্ণাটকে কন্নড়, গুজরাটে গুজরাটি, কেরালায় মালায়লম, অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু, মহারাষ্ট্রে মারাঠি, আসামে অসমিয়া, মণিপুরে মণিপুরী, মিজোরামে মিজো, মেঘালয়ে খাসি ও গাড়ো ভাষার প্রচলন বেশি।
নির্দিষ্ট কোনো ভাষার একচ্ছত্র ব্যবহার নেই ভারতে। উত্তর ভারত ও মধ্য ভারতে যেমন হিন্দি ভাষার প্রচলন বেশি, তেমনি দক্ষিণ ভারতের প্রতিটি রাজ্যের স্ব স্ব আঞ্চলিক ভাষার আধিক্য। তবে সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, ভারতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় হিন্দি ভাষা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অমিত শাহ ভারতে একটি ভাষাকে জাতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহারের কথা বলেন। গতকাল শনিবার তিনি বলেন, ‘এক রাষ্ট্র, এক ভাষা হোক ভারতে। সেই ভাষা হোক হিন্দি।’
অমিত শাহ আরও বলেন, ‘ভারতে বহু ভাষা রয়েছে। প্রতিটি ভাষারই গুরুত্ব রয়েছে। তবে দেশের একটি জাতীয় ভাষা হওয়া প্রয়োজন। যে ভাষাটিকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে ভারতীয় ভাষা হিসেবে। আর যদি কোনো ভাষা দেশকে একসূত্রে বাঁধতে পারে, তবে সেটি হিন্দি।’
অমিত শাহর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা স্টালিন বলেছেন, এসব মন্তব্য থেকে সরে না এলে ডিএমকে আরও একটি ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এটা ইন্ডিয়া নাকি হিন্দিয়া?’
ডিএমকে নেতা স্টালিন আরও বলেন, ‘তামিলনাড়ুর মানুষের রক্তে হিন্দি নেই। রেল, পোস্ট অফিসের নিয়োগ পরীক্ষায় হিন্দি বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে আমরা গর্জে উঠেছিলাম।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখেছেন, ‘আমাদের উচিত সব ভাষা ও সংস্কৃতিকে সমানভাবে সম্মান দেওয়া। আমরা অনেক ভাষাই শিখতে পারি। কিন্তু মাতৃভাষাকে ভোলা উচিত নয়।’
কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী টুইট করেছেন, ‘কবে হিন্দির সঙ্গে কন্নড় ভাষা দিবস পালিত হবে?’
সিপিএমের নেতা ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘গুজরাট হাইকোর্ট যখন বলেছিলেন, গুজরাটিদের জন্য হিন্দি বিদেশি ভাষা, তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ প্রতিবাদ করেননি। তাঁরা এখন হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
অমিত শাহর বক্তব্যের বিরোধিতা করে কংগ্রেস বলেছে, ‘ত্রিভাষা তত্ত্বের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়া ঠিক হবে না। ভাষা হলো আবেগের বিষয়।’
এ বিষয়ে ভারতের সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী বলেছেন, দেশকে হিন্দি দিয়ে বাঁধার অর্থ হতে পারে আরএসএসের ‘হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তান’ নীতির অংশ। এ সিদ্ধান্ত বিভাজন সৃষ্টি করবে।
গত জুন মাসে জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়ায় হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করায় ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছিল।
ভারতের ২০১১ সালের সবশেষ জনগণনায় বলা হয়েছে, দেশের ১০ জন মানুষের মধ্যে ছয়জনের মাতৃভাষা হিন্দি নয়। তবে ভারতে হিন্দিভাষীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ৪১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলা ভাষা, ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এরপর রয়েছে তেলেগু, মারাঠি, তামিল, উর্দু, গুজরাটি, কন্নড়, মালায়লম, ওডিশা, পাঞ্জাবি ও অসমিয়া ভাষা।
ভারতের ১৯৭১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভাষার সংখ্যা ১ হাজার ৬৫২।