সোনিয়াতেই ভরসা কংগ্রেসের
আপাতত কংগ্রেস সভানেত্রী থাকছেন সোনিয়া গান্ধীই। আজ সোমবার দীর্ঘ সাত ঘণ্টার বৈঠক শেষে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত, পরবর্তী এআইসিসির বৈঠক পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধীই আপাতত দলের কান্ডারি থাকবেন। কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের জন্য এআইসিসির বৈঠক ডাকা জরুরি। বৈঠকের শেষে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৬ মাসের মধ্যে ওই বৈঠক ডাকা হবে। প্রস্তাবটি পেশ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
বৈঠক শেষে জানা যায়নি, শুধু সভাপতি নির্বাচন করা হবে নাকি সংগঠনের সর্বস্তরে নির্বাচন হবে। এ–ও জানা যায়নি, পুরোনো ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ অনুযায়ী ভোট হবে, নাকি নতুন করে ইলেকটোরাল কলেজ তৈরি করা হবে। নতুন ইলেকটোরাল কলেজ তৈরি হলে নির্বাচন হতে সময় লাগবে। যদি না সর্বসম্মতভাবে নেতা মনোনয়ন করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে এটা এখন পরিষ্কার, দলের খোলনলচে বদলে সর্বক্ষণের সভাপতি নির্বাচনের জন্য সোনিয়াকে যাঁরা চিঠি লিখেছিলেন, তাঁরাও আপাতত এই ব্যবস্থা মেনে নিচ্ছেন। অর্থাৎ, দলীয় অবস্থা থাকছে ‘যথা পূর্বং তথা পরং’। শীর্ষ নেতাদের চিঠির দরুন ‘আহত ও অভিমানী’ সোনিয়া বৈঠকের শুরুতে নতুন নেতা বেছে নেওয়ার স্বার্থে দায়িত্ব ছাড়ার কথা বললেও দীর্ঘ বৈঠকের শেষে তিনি বলেন, ‘আমি আহত হয়েছি ঠিকই। কিন্তু সবাই আমার সহকর্মী। অতীত ভুলে আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে দল শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শুরু হয় সোমবার বেলা ১১টায়। এবং শুরু থেকেই ভরপুর নাটকীয়তা। দলের অস্থায়ী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী জানিয়ে দেন, তাঁকে একবার অব্যাহতি দেওয়া হোক। ২৪ ঘণ্টার জন্য নিবেদিত হবেন এমন নতুন সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। সোনিয়ার কথা শেষ হতেই আপত্তি জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি বলেন, সোনিয়ার নেতৃত্বের প্রতি দলের সবার আস্থা আছে। যেভাবে তিনি দল পরিচালনা করে আসছেন, তা প্রশংসার যোগ্য। একই কথা বলে সোনিয়ার পক্ষে দাঁড়ান আরেক প্রবীণ নেতা এ কে অ্যান্টনি। কিন্তু জানা যায়, অচিরেই সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাহুল গান্ধীর কিছু ‘মন্তব্যে’।
সোনিয়াকে লেখা দলের শীর্ষ নেতাদের চিঠির কথা গত রোববার জানাজানি হয়। সেই চিঠিতে দলের সার্বক্ষণিক সভাপতি নির্বাচনের প্রসঙ্গ ছিল। বলা হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির উত্থানে দেশের যুব সম্প্রদায় কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। কংগ্রেসের নেতৃত্বহীনতা সর্বস্তরে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। দল হয়ে পড়েছে দিশাহীন। ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে সেই চিঠির প্রসঙ্গ ওঠে স্বয়ং রাহুল গান্ধীর কথায়। দুপুরের মধ্যে খবর রটে যায়, রাহুল নাকি এই চিঠির ‘টাইমিং’য়ের প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এমন সময় এই চিঠি লেখা হলো যখন দল মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে লড়ছে এবং সোনিয়া গান্ধী অসুস্থ। তিনি নাকি বলেন, যাঁরা এই চিঠি লিখেছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই বিজেপির গোপন সম্পর্ক আছে।
এই রটনা মান্যতা পেয়ে যায় প্রবীণ নেতা ও আইনজীবী কপির সিব্বলের টুইটে। বৈঠক চলাকালীন সেই টুইট করে সিব্বল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘গোপন আঁতাত? গত ৩০ বছরে বিজেপির সমর্থনে একটাও কথা বলিনি। রাজস্থান হাইকোর্টে লড়াই করে কংগ্রেস সরকার বাঁচিয়েছি। মণিপুরে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েছি। তা সত্ত্বেও বিজেপির সঙ্গে আঁতাত?’ সিব্বলের ওই টুইটের সঙ্গে সঙ্গেই জানা যায়, প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজাদ নাকি বলেছেন, বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি রাজ্যসভার বিরোধী নেতা থাকবেন না। ওয়ার্কিং কমিটি থেকেও পতদ্যাগ করবেন।
এমনকি রাজনীতি পর্যন্ত ছেড়ে দেবেন। বৈঠক চলাকালীনই সিব্বল তাঁর টুইটটি প্রত্যাহার করে নেন। সংবাদমাধ্যম জানায়, সিব্বল বলেছেন, রাহুল নিজে নাকি তাঁকে জানিয়েছেন গোপন আঁতাত থাকার কোনো অভিযোগ তিনি করেননি।
একই কথা বলেন গুলাম নবি আজাদও। এনডিটিভিকে ফোন করে আজাদ বলেন, রাহুলের জন্য তিনি ইস্তফা দেওয়ার কথা বলেননি। রাহুল বৈঠকে ওই ধরনের কোনো কথাও বলেননি। আজাদ জানান, চিঠি না পড়ে যাঁরা সমালোচনা করছেন এবং বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত থাকার কথা বলছেন, ইস্তফা দেওয়ার কথা ছিল তাঁদের উদ্দেশেই বলা। তিনি বলেন, সোনিয়া বা রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে তাঁরা কিছু বলেননি। প্রশ্নও তোলেননি। তাঁরা চেয়েছেন সর্বক্ষণের সভাপতি, যিনি ২৪ ঘণ্টা দলের কর্মীদের পাশে থাকবেন।
আজ সকাল থেকেই কংগ্রেস সদর দপ্তর চত্বর গমগম করে ওঠে। আকবর রোডে সোনিয়া–রাহুলপন্থীদের জমায়েত শুরু হয়। মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে সোনিয়া–রাহুলের নামে। ২৪ আকবর রোড ও সোনিয়ার বাসভবন ১০ জনপথ লাগোয়া। ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে যোগ দিতে সকালেই সেখানে চলে আসেন রাহুল। কিছু পরে আসেন প্রিয়াঙ্কা। সন্ধ্যার আগেই জানাজানি হয়, আপাতত সোনিয়ার হাতেই থাকছে দলের দায়িত্ব।