সিএএ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে দুই ধারা
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতেই ক্ষোভ চলছে। এ আইন ভারতের সংসদে পাস করেছিল শাসক দল বিজেপি। কিন্তু এ আইন এখনো কার্যকর করতে পারেনি বিজেপি। এ আইন কার্যকর করার পক্ষে এবার যেমন দাবি তুলেছে বিজেপিরই সমর্থিত পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সংগঠনের একটি অংশ। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মতুয়াদের আরেকটি সংগঠন।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন মতুয়া মহাসংঘের শীর্ষ নেতারা চাইছেন, অবিলম্বে এ আইন কার্যকর হোক। এই দলে রয়েছেন মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। আবার বিরোধিতায় রয়েছে মতুয়াদের আরেকটি সংগঠন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক তৃণমূল সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর।
গতকাল সোমবার বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, তাঁরা চান এ আইন অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। এর জন্য তাঁরা অনন্তকাল অপেক্ষা করতে চাইছেন না। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার তিনবার এ আইন কার্যকর করতে সময় নিয়েছেন। এবার তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করবেন, কবে কেন্দ্রীয় সরকার এ আইন কার্যকর করবে।
শান্তনু ঠাকুর আরও বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় তাঁরা সন্তুষ্ট নন। মতুয়াদের গড়া মতুয়া মহাসংঘ একটি বড় ধর্মীয় সংগঠন। উদ্বাস্তু সমাজের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মতুয়া সম্প্রদায়ের সদস্য রয়েছেন এই সংগঠনে। সিএএ আজ তাঁদের কাছে বড় ইস্যু। সেইভাবে মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা দিতে হবে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ গতকাল বলেছেন, ‘বিজেপি আমলেই সব উদ্বাস্তু নাগরিকত্ব পাবে। আপনাদের আর কয়টা দিন অপেক্ষা করতে হবে। বিজেপিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই সিএএ কার্যকর করার জন্য।’ তিনি বলেন, মতুয়া সংগঠনের পাঁচ লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। আর সাধারণ সদস্যের সংখ্যা ২০ লাখ।
গত রোববার কলকাতার বিজেপির কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির রাজ্যের প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ভারতে অবিলম্বে সিএএ কার্যকর করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিজেপি। বিজেপি মতুয়াদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে বলতে চাইছে, ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতে সিএএ কার্যকর হবে। এটা বিজেপির মূল লক্ষ্য।
শনিবার উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘে’র এক বৈঠকে দাবি ওঠে, অবিলম্বে এ রাজ্যে কার্যকর করতে হবে সিএএ। যদি বিজেপি সরকার এ দাবি মেনে না নেয়, তবে এ আইন কার্যকর করার জন্য তীব্র আন্দোলন করবে মতুয়ারা। এই হুমকির পর রোববারই কলকাতার রাজ্য বিজেপি দপ্তরে এক সাংবাদিক বৈঠকে দলের প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার এ আইন কার্যকর করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতে কার্যকর হবে সিএএ।
ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ এর আগে সংসদে পাস হলেও সেই আইন এখনো কার্যকর করতে পারেনি বিজেপি সরকার। তাদের প্রতিশ্রুতিমতো এ আইন কার্যকর করতে চাইলেও তা বিরোধীদের বাধার মুখে কার্যকর করতে পারেনি এখনো। যদিও বিজেপি-বিরোধীরা দাবি করেছে, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বিভাজনের রাজনীতি করার জন্য এ আইন এনেছে বিজেপি। কিন্তু বিজেপি এ আইন পাস করে যে কৌশল নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, কার্যত তা এখনো সফল হয়নি। বিজেপির সেই কৌশলও কাজে লাগেনি।
পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও সাবেক রাজ্য সভাপতি সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, আসলে এ আইন আনার পর বিজেপি বুঝে গেছে, হিন্দু, মুসলিম—সবাই সিএএর বিপক্ষে। এবার ভোটে সে চিত্রই ফুটে উঠেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্যে সময় চেয়েছে সংসদের দুই কক্ষ রাজ্যসভা ও লোকসভায় এ নিয়ে গঠিত স্থায়ী সংসদীয় কমিটির কাছে। ফলে তৃতীয়বারের জন্য আরও তিন মাসের সময় বাড়িয়ে দিয়েছে দুই সংসদের আইনবিষয়ক স্থায়ী কমিটি। এর আগে অবশ্য দুই দফায় ছয় মাস সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার বাড়ানো হলো তৃতীয়বারের জন্য। এ আইন বাতিলের দাবিতে কলকাতা, দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিজেপি–বিরোধীরা রাস্তায় নেমে এ আইন বাতিলের তীব্র আন্দোলন শুরু করে। কলকাতা ও দিল্লির আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে এ আন্দোলন থিতিয়ে পড়লেও এখনো গোটা দেশে এ আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন জারি রয়েছে।