২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সরকারি প্যাকেজ ঘোষণার দাবি পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মাওবাদীদের

প্রতীকী ছবি।
এএনআই

আত্মসমর্পণের পর জীবনের মূলধারায় ফিরলেও প্রতিশ্রুত সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন আত্মসমর্পণ করা পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলের সাবেক মাওবাদীরা। বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল রোববার পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়ের ঝাঁটিবনি মাঠে এক সভায় তাঁরা এ দাবি জানান। সভায় অন্তত ৫০ জন মাওবাদী অংশ নেন। এ সময় তাঁরা বলেন, অন্তত ১৭০ জন মাওবাদী দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হলেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি। এ সময় তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুলিশ ও ডিআইবির কাছে জমা দিলেও সরকারি সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অথচ তাঁদের অনেকেই ১০ বছর কারাগারে থেকে এখন জামিনে মুক্ত হয়েছেন। অপর দিকে যেসব মাওবাদী জেল না খেটে আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁরা সরকারি প্যাকেজের নানা সুবিধা পেয়েছেন। তাঁদের অনেকের চাকরি হলেও তাঁরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবার তাঁরা চাকরিসহ বেঁচে থাকার প্যাকেজের সুবিধা চাইছেন। মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতর মুক্তিরও দাবি করেন তাঁরা।

ভারতের ১০টি রাজ্য এখনো মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্য হিসেবে পরিচিত। এই রাজ্যগুলো হলো পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্র প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওডিশা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ঝাড়খন্ড ও বিহার। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গলমহল নামে পরিচিত ৪টি জেলা মাওবাদী–অধ্যুষিত। রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং বাঁকুরা জেলার বিস্তীর্ণ জঙ্গলমহল এলাকা।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা পরিবর্তনের আগে রাজ্যে মাওবাদী তৎপরতা বেড়ে যায়। গোটা জঙ্গলমহলে মাওবাদী তৎপরতায় খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়।

মাওবাদীদের তৎপরতা রোধে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের নানা উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় জঙ্গলমহলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী মাওবাদী তৎপরতা বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি তাঁদের।

এর আগে ২০০৮ সালে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জঙ্গলমহলে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কলকাতায় ফেরার পথে মাওবাদী হামলার শিকার হন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম বিলাস পাশোয়ান ও জিতিন প্রসাদ বেঁচে গেলেও মাইন বিস্ফোরণে ৬ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন।

এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নামেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ঘোষণা দেন, নির্বাচনে তৃণমূল জিতলে মাওবাদীদের জীবনের মূলধারায় ফিরিয়ে এনে তাঁদের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ দেওয়া হবে—এমন আশ্বাসে সাড়া দিয়ে মাওবাদীদের একাংশ বিধানসভা নির্বাচনে মমতাকে সমর্থন দেয়। মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতসহ অনেকেই মমতার পাশে দাঁড়ান।

কিন্তু মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা ও মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেনজি মমতাকে সমর্থন দেননি। ২০১১ সালের নির্বাচনে মমতা বিপুল ভোটে জয়ের পর মাওবাদীদের জীবনের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে ঘোষণা দেন নানা প্যাকেজের কথা। আর এতে সাড়া দিয়ে কয়েক শ মাওবাদী জীবনের মূলধারায় ফিরে আসেন। তবে কিষেনজি না ফিরে বরং গোপনে জঙ্গলমহলে তাঁর তৎপরতা চালু রাখেন।

একপর্যায়ে জঙ্গলমহলের বুড়িশোল জঙ্গলে ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর পুলিশের সঙ্গে এক সংঘর্ষে নিহত হন কিষেনজি। তাঁর মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে জঙ্গলমহলে মাওবাদী তৎপরতা কমতে থাকে।