ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার টিকিয়ে রাখা ও পতনের লড়াইয়ের একাধিক আঙিনা খুলতে চলেছে। লড়াই শুধু বিধানসভা কক্ষ, আদালতের আঙিনা এবং নির্বাচন কমিশনেই যে হতে চলেছে, তা নয়। শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত আজ শুক্রবার মুম্বাইয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রয়োজনে শিবসেনার সদস্যরা লড়াইয়ে নামবেন রাস্তায়। তাঁর কথা, ‘আমরা মোটেই পরাজয় বরণ করার জন্য বসে নেই। এই সরকার পাঁচ বছর চলবে।’
একই সুরে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। তবে তাঁর পায়ের মাটি সরে যাচ্ছে দ্রুত। একে একে ৪০ জন দলীয় বিধায়ক বিক্ষুব্ধ শিবিরে চলে গেছেন। তাঁর সরকারের পতন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। তবু আজ জেলা স্তরের নেতাদের সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর আবাস “বর্ষা” বাংলো ছেড়ে চলে এসেছি ঠিকই, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়িনি।’ তাঁর এই বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
উদ্ধব ঠাকরের এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবের মুখেই বিদ্রোহী শিবসেনা একনাথ শিন্ডে সঙ্গী বিধায়কদের নিয়ে আসামের গুয়াহাটি থেকে মুম্বাই চলে আসছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর। আজ সন্ধ্যায় মুম্বাই পৌঁছে উদ্ধব ঠাকরে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা তাঁদের।
এত দিন বিধানসভায় শিবসেনার পরিষদীয় দলের নেতা ছিলেন একনাথ শিন্ডে। বিদ্রোহ ঘোষণার পর তাঁকে সেই পদ থেকে সরিয়ে নেতা করা হয় অজয় চৌধুরীকে। ডেপুটি স্পিকার এনসিপি নেতা নরহরি জিরওয়াল গতকাল সেই নিয়োগে সম্মতি দেন। তবে শিন্ডে শিবিরও তারাই মূল শিবসেনা দাবি জানিয়ে ডেপুটি স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে এবং শিন্ডেকে তাদের নেতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিধানসভার স্পিকার ছিলেন কংগ্রেসের নানা পাটোলে। ফেব্রুয়ারিতে ইস্তফা দিয়ে কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি হন তিনি। ফলে পদটি এখনো খালি।
অন্যদিকে পরিষদীয় দলের বৈঠকে কোনো কারণ না দেখিয়ে গরহাজির থাকার দরুন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে প্রথম দফায় শিন্ডেসহ ১২ জন ও তার পরের ধাপে ৪ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে দলত্যাগ রোধ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডেপুটি স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে গেলে সরকার পতনের তৎপরতা শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে, তা অজানা। মূল লড়াইটা হবে বিধানসভা কক্ষে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপি ও শিন্ডে গোষ্ঠী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিক্ষুব্ধ শিবির তৎপর নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার প্রশ্নেও।
আপাতদৃষ্টিতে শিন্ডের দিকে অধিকাংশ শিবসেনা বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু মুম্বাই ফিরে এলে বিক্ষুব্ধ শিবির কতটা জোটবদ্ধ থাকে, সেটাও দেখার বিষয়। জোট সরকার ধরে রাখতে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার সক্রিয়। উদ্ধব ঠাকরেও চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁর মতো করে। আজ জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্য দিকে বিজেপিও সক্রিয়। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডনবিশ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে উদ্ধবকে সরাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। কেন্দ্রের শাসক দলের সমর্থন থাকায় শিন্ডের পক্ষে লড়াইটা খুব একটা প্রতিকূল নয়। যদিও দলত্যাগের প্রক্রিয়া নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন থাকার অর্থ দলে ভাঙন, আইনে এমনটি বলা থাকলেও সেই ভাঙনের চরিত্র বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। ভাঙন একসঙ্গে নাকি পর্যায়ক্রমে, তা নিয়ে আইনের ব্যাখ্যা ক্ষেত্রবিশেষে একেক রকম হয়েছে। এ কারণে লড়াইটা আইনের আঙিনাতেও হতে পারে বলে অনুমান।