দুই শিষ্যকে ধর্ষণের অপরাধে ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সরকারের তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) বিশেষ বিচারক জগদীপ সিং গতকাল সোমবার এই রায় দেন। এ ছাড়া তাঁকে দুই মামলায় ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে।
ধর্ষিত দুই নারী জানিয়েছেন, রাম রহিমের আরও বেশি শাস্তির দাবিতে তাঁরা উচ্চতর আদালতে আবেদন জানাবেন। একই দাবি জানাবে সিবিআইও। কম শাস্তির দাবিতে উচ্চতর আদালতে যাবেন রাম রহিমের আইনজীবীরা।
গত শুক্রবার রাম রহিমকে অপরাধী সাব্যস্ত করেন আদালত। এরপর উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও দিল্লিতে তাণ্ডব চালান তাঁর ভক্তরা। সহিংসতায় প্রাণ হারান ৩৮ ব্যক্তি। আহত কমপক্ষে ২৫০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করা হয়।
সাজা ঘোষণার পর পরিস্থিতি যাতে বিগড়ে না যায়, সে জন্য গতকাল নিরাপত্তা বাহিনী সজাগ ছিল। বিচারপতি জগদীপ সিং চণ্ডীগড়ের পাঁচকুলা আদালতে শাস্তি ঘোষণা করেননি। হরিয়ানার সানোরিয়া কারাগারে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে রাম রহিমকে রাখা হয়েছে। কারাগারেই বসে বিশেষ আদালত। বেলা আড়াইটার দিকে বাদী ও বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের ১০ মিনিট করে সময় দেন বিচারক। বেলা সাড়ে তিনটায় তিনি শাস্তি ঘোষণা করেন।
স্বঘোষিত ধর্মগুরুর অনুগামীরা শুক্রবার যে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন, তা যাতে ফের না হতে পারে, সে জন্য হরিয়ানা রাজ্য প্রশাসন এবার ছিল সজাগ। সিরসা শহরে তাঁর প্রধান ঘাঁটি ডেরা সচ সউদা প্রায় খালি করে দেওয়া হয়েছিল। ডেরা ঘিরে রাখে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী। জেলখানা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি স্থানে গণমাধ্যমকর্মীদের আটকে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা সেখানে গিয়েই রায়ের খবর জানান।
গতকাল রায় ঘোষণার গোটা প্রক্রিয়াটি হয় কড়া নিরাপত্তায় গোপনে। জেলখানার অভ্যন্তরে বিশেষ আদালতকক্ষে দুই পক্ষের আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়া আর কেউ উপস্থিতি ছিলেন না। বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, শুনানি শুরু হলে ৫০ বছর বয়সী রাম রহিম কাঁদতে কাঁদতে বিচারপতির কাছে হাত জোড় করে ক্ষমাভিক্ষা করেন। বিচারপতিকে তাঁর আইনজীবী অনুরোধ করেন কম সাজা দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, রাম রহিম এক ধর্মীয় নেতা ও সমাজ সংস্কারক। সারা দেশে তাঁর লাখ লাখ ভক্ত ও অনুগামী। অনেকগুলো আশ্রম চালান তিনি। শিক্ষার প্রসার ও আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে তিনি মানুষের উপকার করছেন। অতএব, বিচারপতি যেন সবচেয়ে কম শাস্তি দেন।
সিবিআইয়ের আইনজীবী এই আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, ধর্মের আড়ালে রাম রহিম অপরাধ করে যাচ্ছেন। যে অপরাধ তিনি করেছেন, তা বিরলের মধ্যে বিরলতর। যে দুই ধর্ষিত নারী অভিযোগ করেছেন, তাঁদের একজন ২০০২ সালে ছিলেন নাবালিকা। যাঁদের তিনি তিনি ধর্ষণ করেন, তাঁরা ছিলেন রাম রহিমেরই আশ্রিত ও ভক্ত। তা ছাড়া নিপীড়িতদের তিনি ভয়ও দেখিয়েছিলেন। অপরাধ ধামাচাপা দিতে রাম রহিম তাঁর এক অনুগামী ও এক সাংবাদিককে খুনও করেন। অতএব, তাঁকে যেন সবচেয়ে বেশি সাজা দেওয়া হয়।
রাম রহিমের এই অপরাধ ১৯৯৭ সালের। ২০০২ সাল থেকে মামলা শুরু হয়। সেই সময় ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ধর্ষণের সাজা ছিল ৭ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড। ২০১২ সালে নির্ভয়াকাণ্ডের পর আইনের বদল ঘটে। বর্তমানে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন।
রাম রহিমের এই কুকীর্তির কাহিনি ফাঁস করেছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতি। তাঁকে খবর দিতেন ডেরারই সাবেক সাধু রঞ্জিত। অভিযোগ, এই দুজনকেই স্বঘোষিত ধর্মগুরু খুন করান। সেই মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি।