মহাসংকটে মহারাষ্ট্র সরকার

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে
ছবি : এএনআই

মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে তাঁরই দল শিবসেনায় বিদ্রোহের কারণে মহারাষ্ট্রের জোট সরকারের এখন টলমল অবস্থা। বিদ্রোহী শিবসেনাদের দাবি, উদ্ধব এখনই কংগ্রেস-এনসিপি জোট ছেড়ে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিন। তারপর সমঝোতার বিষয়টি বিবেচিত হবে। আসামের গুয়াহাটির হোটেলে মহারাষ্ট্রের বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের রাখা হয়েছে।

গুয়াহাটির হোটেলে তোলা বিধায়কদের ছবি দিয়ে বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী একনাথ শিন্ডের দাবি, ৪২ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে তাঁদের পক্ষে। তাঁরা চান, দল ‘স্বাভাবিক মিত্র’ বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধুক।

সংকট তীব্রতর হয়ে ওঠায় মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে আগেই সরকারি আবাস ‘বর্ষা’ ছেড়ে চলে গেছেন নিজস্ব ঠিকানা ‘মাতোশ্রী’তে। অবস্থা যা, তাতে আড়াই বছরের জোট সরকারের পতন যেকোনো সময় ঘটতে পারে। এ পরিস্থিতিতে শিবসেনা কী করে—সে দিকে নজর রেখে নিজেদের ঘর সামলাতে ব্যস্ত কংগ্রেস ও এনসিপি। এই চাপের মুখে শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেছেন, জোট ছাড়ার কথা তাঁরা বিবেচনা করবেন। কিন্তু তার আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্রোহী বিধায়কদের মুম্বাই ফিরে আসতে হবে।

মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোট হয়েছিল ২০১৯ সালের অক্টোবরে। ২৮৮ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় বিজেপি জিতেছিল ১০৬টি আসন, শিবসেনা পেয়েছিল ৫৬টি। শারদ পাওয়ারের এনসিপি ৫৪ এবং কংগ্রেস ৪৪টি আসন পেয়েছিল। সরকার গঠনের সময় মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে অনড় থেকে শিবসেনা শেষ পর্যন্ত বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে এনসিপি ও কংগ্রেসের সমর্থনে গঠন করে ‘মহা বিকাশ আগাড়ি’ জোট সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হন শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। আড়াই বছর কাটতে না কাটতেই শিবসেনাদের বিদ্রোহের মুখে পড়ে উদ্ধব বলেছেন, ‘ইস্তফা দিতে আমি প্রস্তুত। শুধু প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, শিবসেনারই কেউ হবেন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী।’

বিদ্রোহের এই সূত্রপাত গত সোমবার। তার আগে মহারাষ্ট্রে রাজ্যসভা ও বিধান পরিষদের ভোটে বিপুল ক্রস ভোটিংয়ের দরুন বিজেপি একটি করে বাড়তি আসন জিতে নেয়। এ নিয়ে শিবসেনায় দোষারোপের পালার মধ্যে পূর্ত ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ২১ জন অনুগামী ও একজন স্বতন্ত্র বিধায়ককে নিয়ে সবার অলক্ষ্যে পৌঁছে যান বিজেপিশাসিত গুজরাটের সুরাত শহরে। ক্রমেই একনাথের সঙ্গী সংখ্যা বাড়তে থাকে। বুধবার তাঁরা গুজরাট ছেড়ে চলে যান আর এক বিজেপিশাসিত রাজ্য আসামের গুয়াহাটিতে। সেখানে গিয়ে তাঁদের দাবি, দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে প্রায় ৪২ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে তাঁদের। তাঁরা চান, শিবসেনা তার ‘অস্বাভাবিক মিত্র’ কংগ্রেস ও এনসিপি ছেড়ে বেরিয়ে আসুক এবং ‘স্বাভাবিক মিত্র’ বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার চালাক। শিন্ডে অনুগামীদের দাবি, এই ‘অস্বাভাবিক’ জোটের কারণে শিবসেনার ক্ষতি হচ্ছে। লাভ হচ্ছে কংগ্রেস-এনসিপির। শিবসেনা বরাবর হিন্দুত্ববাদী ও জাতীয়তাবাদী দল। হিন্দুত্ববাদ থেকে সরে এসে শিবসেনা তার চরিত্র হারিয়ে ফেলছে।

এই বিদ্রোহের মধ্যেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ও রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। শিবসেনা দলে ভাঙন ধরাতে গেলে শিন্ডের প্রয়োজন অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ (৩৭ জন) বিধায়কের সমর্থন। না হলে দলত্যাগ রোধ আইনে পড়ে তাঁরা বিধায়ক পদ হারাবেন। এই সমর্থন তিনি পাবেন কি না, তা বোঝা যাবে বিধানসভা কক্ষে শক্তি পরীক্ষার সময়। না পেলে বিধানসভার আসনসংখ্যা কমে যাবে এবং শক্তি পরীক্ষায় জোট সরকার সংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে। সেই ঝুঁকি এড়াতে বিদ্রোহীরা চাপ দিচ্ছেন পুরোনো মিত্র বিজেপির হাত ধরতে। সেখানে উদ্ধব পাল্টা চাল চেলেছেন মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ শিবসেনার জন্য নিশ্চিত করতে।

সরকার ফেলার এই খেলায় বিজেপি মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি ছেড়ে দেবে কি? বিশেষ করে বিজেপির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ যখন মুখ্যমন্ত্রিত্ব ফিরে পেতে মরিয়া? প্রশ্ন উঠছে ঠাকরে পরিবারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও। দলের হিন্দুত্ববাদী চরিত্র রক্ষার জন্য বিজেপির সঙ্গে হাত মেলালে শিবসেনার অস্তিত্ব কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে, উদ্ধবকে তা ভাবতে হবে। কারণ, দলে তাঁর পুত্র আদিত্যের উত্থান পুরোনো শিবসেনারা মেনে নিচ্ছেন না।

আরও পড়ুন