মমতার হামলার দাবিকে ‘নাটক’ বলছে বিজেপি
ভোটের প্রচারে নন্দীগ্রামে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কথা চালাচালি শুরু হয়েছে। ঘটনার পর মমতার দাবি, তাঁর ওপর ‘ষড়যন্ত্র ও হামলা’ হয়েছে। অন্যদিকে দেশটির শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারা বলছেন, ‘দুর্ঘটনাকে হামলা বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন মমতা। ভোটের আগে এটা তাঁর সহানুভূতি আদায়ের নাটক।’ খবর এনডিটিভির।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে লড়ছেন মমতা। আজ বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নন্দীগ্রামের কয়েকটি মন্দির পরিদর্শনে যান তিনি। সন্ধ্যায় রেয়াপাড়ায় রানিচকের একটি মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার সময় ভিড়ের মধ্য থেকে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রেয়াপাড়ায় একটি মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার সময় অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনের একটি দল ঘিরে ধরে মমতাকে। এ সময় তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় তারা। এতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রীর মাথা, কপাল ও পায়ে আঘাত লাগে।
ঘটনার পরপরই দেহরক্ষীরা মমতাকে টেনে তুলে গাড়িতে ওঠান। পরে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে গাড়িটি। তবে এর আগেই উপস্থিত সাংবাদিকদের আঘাতের চিহ্ন দেখান মমতা। অভিযোগ করেন, ‘হামলার সময় পুলিশের কেউ ঘটনাস্থলে ছিল না।’
মমতা বলেন, ‘ভিড়ের মধ্যে চার-পাঁচজন বাইরে থেকে ঢুকে পড়েছিল। ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আমাকে। ইচ্ছাকৃত ধাক্কা মারা হয়। এর পেছনে অবশ্যই ষড়যন্ত্র ছিল।’
পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন
পরে সফর সংক্ষিপ্ত করে আহত মমতাকে সড়কপথে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ভর্তি করা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। প্রাথমিকভাবে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের বরাতে জানিয়েছে এনডিটিভি। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মমতার এক্স-রে করানো হবে। চোট গুরুতর হলে রাতেই পায়ে প্লাস্টার করা হবে। সে ক্ষেত্রে বেশ কয়েক দিন তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।
মমতা দুর্ঘটনাকে হামলার রূপ দিতে চাইছেন
তবে মমতার ভাষ্য মেনে এ ঘটনাকে ‘হামলা’ বলতে নারাজ বিজেপি। পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘এটা নিছকই একটি দুর্ঘটনা। অথচ তিনি (মমতা) এটিকে হামলার রূপ দিতে চাইছেন। এটা গ্রহণেযাগ্য নয়। ওই সময় চারপাশে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাঁকে ঘিরে ছিলেন।’
একই সুরে কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির নেতারাও। গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলা বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট অর্জুন সিংহ প্রশ্ন রাখেন, ‘তাঁর (মমতার) গাড়িবহরে কি তালেবান হামলা করেছে? ওই সময় তাঁর চারপাশে পুলিশ ছিল। আইপিএস নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ছিল। কে তাঁর পাশে ঘেঁষবে?’ অর্জুন সিংহ আরও বলেন, ‘মমতার ওপর হামলা হয়নি। বরং তিনি ভোটের আগে সহানুভূতি আদায়ে এ নাটক করছেন।’
রাজনীতিকদের নিন্দা
এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের অন্যান্য দলের রাজনীতিকেরা। টুইটার বার্তায় আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘মমতা দিদির ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে। আমি তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
কংগ্রেস নেতা অভিজিত মুখার্জি টুইট করেন, ‘আমি মমতা দিদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। জড়িতদের অবশ্যই সাজা পেতে হবে। দিদি, আপনি একটি কঠিন লড়াইয়ে আছেন। এতে আপনি এগিয়ে যাবেন এবং বিজয় অর্জন করবেন।’
মমতার আরোগ্য কামনা করে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর হামলা হয়েছে। ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এখন বিজেপি সরকারের নির্বাচন কমিশনের অধীনে। জনগণ জানে, তাঁরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না। এ হামলায় জড়িতদের বিচার করতে হবে।’