মমতা কি ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন
গত বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পায় মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয়তার কারণে দলটির নেতা–কর্মীরা মমতাকে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বানানোর স্বপ্ন দেখছেন। আবার দলের কোনো কোনো নেতা মনে করছেন, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ক্ষমতায় থাকার সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়বেন মমতা; যদিও তৃণমূল নেতাদের এ চিন্তাকে নিছক স্বপ্ন বলেই মনে করছেন বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা।
মমতাকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক আলোচনার শুরু গত রোববার। ওই দিন দলের সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ ফেসবুক পোস্টে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ২০৩৬ সাল পর্যন্ত। মমতা ক্ষমতায় আসেন ২০১১ সালে। তার মানে হলো তিনি ২৫ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় থাকবেন। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন, এরই মধ্যে যদি মমতা দিল্লির ক্ষমতায় ফিরে যান, তবে সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের রাজনীতির পরিস্থিতি অন্য রকম হবে।
কুনাল ঘোষ আরও লিখেছেন, ২০৩৬ সালে মমতা বিদায় নেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসবেন তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মমতা থাকবেন দলের উপদেষ্টা হয়ে। দলকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, শাসন করবেন এবং উপদেশ দেবেন। তিনি আরও বলেছেন, মমতাই এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের মেয়াদের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়বেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড গড়েছিলেন সিপিএম নেতা জ্যোতি বসু। তিনি একটানা ২৩ বছর ১৩৭ দিন মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন। ১৯৭৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। তবে ভারতে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ সময় থাকার রেকর্ড গড়েছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ২৪ বছর ১৬৫ দিন। আর মমতা মুখ্যমন্ত্রী পদে এখনো বহাল ১০ বছর ৩৪৯ দিন। অন্যদিকে, ভারতের বাঙালি–অধ্যুষিত দ্বিতীয় রাজ্য ত্রিপুরার সিপিএম–দলীয় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ক্ষমতায় ছিলেন ১৯ বছর ৩৬৩ দিন।
এদিকে তৃণমূল নেত্রী ও হুগলির আরামবাগ আসনের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার গত মঙ্গলবার এক টুইটবার্তায় লিখেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। শপথ নেবেন আরএসএস–মনোনীত রাষ্ট্রপতির কাছে। আর ২০২৪ সালেই রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শপথ নেবেন রাজ্যপাল ‘গোবর্ধন’ জগদীপ ধনখড়ের কাছে। অপরূপা পোদ্দার আরও লিখেছেন, গতবারের বিধানসভা নির্বাচনে বাম দল ও কংগ্রেস শূন্য হয়ে গেছে। এখন সব দায়িত্ব তৃণমূলের হাতে বর্তেছে। তাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসবিরোধী জোট ক্ষমতায় আসবে। মমতা হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
মমতাকে নিয়ে তৃণমূলের দুই নেতা–নেত্রীর বক্তব্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি আবার সরব হয়েছে। পশ্চিবঙ্গের বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, মমতাকে দিল্লির লোভ দেখিয়ে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর গদিছাড়া করা হবে। বসানো হবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আখেরে কিন্তু মমতা দুকুলই হারাবেন—মুখ্যমন্ত্রীর পদ ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন।
অন্যদিকে, রাজ্য কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘ওরা (তৃণমূল) প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বুনতে পারে। আমরা রাজনীতি করি। জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা করি না।’
রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হচ্ছে, তৃণমূলের এই দুই নেতা স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলেও তা বাস্তবায়ন কঠিনই হবে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতার ২৫ বছর থাকার রেকর্ড গড়তে আরও ১৪ বছর লাগবে। এ সময়ের মধ্যে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া অনেকটাই কঠিন হবে। কারণ, কংগ্রেস ও বিজেপিবিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রার্থী ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অনেকেই আছেন।
এ ছাড়া ভারতের সব রাজ্য একবাক্যে মমতাকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর সবুজ সংকেত দেবে কি না, সে প্রশ্নও রয়েছে। কারণ, মমতা শুধু একটি রাজ্যের ক্ষমতায়। সেই রাজ্যের ৪২টি লোকসভা বা সংসদীয় আসনের মধ্যে এখন ২২টির ক্ষমতায় মমতার দল। অন্যদিকে, ভারতের লোকসভায় আসনের সংখ্যা ৫৪৩। সুতরাং এই বিরাট সংসদে এখন ২২টি আসনে থেকে মমতার দল প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। যদি ধরেও নেওয়া যায়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনেই মমতা জিতবে, তবু কি পারবেন প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হতে?