ভারতের অর্থনীতি অপরিকল্পিত লকডাউনের বলি: রাহুল

রাহুল গান্ধী
ছবি: এএফপি

করোনার মোকাবিলায় ‘অপরিকল্পিত লকডাউনের’ সিদ্ধান্তের দরুন খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ বুধবার দেড় মিনিটের এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করে তিনি বলেন, প্রথম দফার দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউনের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। পথে বসিয়েছে খেটে খাওয়া গরিব মানুষদের।

ভারতের বেহাল অর্থনীতি নিয়ে শাসকদলকে নিয়মিত যে আক্রমণ রাহুল চালিয়ে আসছেন, বুধবারের ভিডিও বার্তা ছিল তারই অঙ্গ। বার্তা সম্প্রচারের সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের প্রবৃদ্ধির ফল প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, করোনাকালের প্রথম তিন মাসে প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। সংকোচনের দায় ‘ঈশ্বরের’ ঘাড়ে চাপিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ বলেছেন, ‘করোনা ও বেহাল অর্থনীতি ঈশ্বরের মার।’ এ সময় রাহুল বললেন, এ জন্য সম্পূর্ণ দায়ী প্রধানমন্ত্রী নিজেই। ২১ দিনের জন্য লকডাউনের ঘোষণার সময় তিনি বলেছিলেন, মহাভারতের যুদ্ধ ১৮ দিনে শেষ হয়েছিল। তিনি ৩ দিন বাড়তি সময় চেয়ে নিচ্ছেন। ২১ দিনে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করবেন। ভিডিও বার্তায় এই কথা জানিয়ে রাহুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে বিভ্রান্ত করেছেন। অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন চাপিয়ে দিয়ে তিনি দেশের গরিবদের পথে বসিয়েছেন।

অর্থনীতির বেহাল অবস্থার জন্য রাহুল এর আগে প্রধানমন্ত্রীর অন্য দুই সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছিলেন। প্রথমটি ছিল নোট বাতিল, দ্বিতীয়টি অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা করের (জিএসটি) প্রচলন। বুধবার তিনি বলেন, ওই দুই অবিবেচক সিদ্ধান্তের পর তৃতীয় আঘাত ২১ দিনের লকডাউন। অসংগঠিত ক্ষেত্র যেটুকু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল, লকডাউনের জন্য তা ধরাশায়ী হয়। গরিব, মধ্যবিত্ত ও ছোট ব্যবসায়ীরা একেবারে শেষ হয়ে যান। বহু মানুষের প্রাণ যায়। কর্মহীন হয়ে পড়েন কোটি কোটি মানুষ। অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যায় ওই ২১ দিনেই। তিনি বলেন, করোনাকে শেষ করা দূরের কথা, প্রধানমন্ত্রীর অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্তের ফলে সংক্রমণের নিরিখে ভারত এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। দৈনিক মৃত্যুর হারে প্রথম।

রাহুলের ভিডিওতে বলা হয়েছে, লকডাউনের জন্য বন্ধ হওয়ার মুখে ৭ লাখের বেশি ছোট দোকান। এক-তৃতীয়াংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পও বন্ধ হওয়ার জোগাড়। ৩৮৩ জন গরিব প্রাণ হারিয়েছেন। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২ কোটি ৭০ লাখ যুবা কাজ হারিয়েছেন। রাহুল বলেন, লকডাউনের পর এখন খোলার সময় এসেছে। কংগ্রেস বারবার ‘ন্যায় যোজনা’ চালু করতে বলেছে। বলেছে গরিবের হাতে টাকা দেওয়া হোক, যাতে তারা বাঁচে। অথচ সরকার কান দেয়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বাঁচার জন্য ১ লাখ কোটি টাকার এক প্যাকেজের দাবি কংগ্রেস করেছিল। সরকার কিছুই করেনি। অথচ কিছু বড় শিল্পপতির জন্য ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার কর ছাড় দিল। রাহুল ভিডিও বার্তায় বলেন, লকডাউন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল না, ছিল দেশের গরিব মজুর, কৃষক, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, অসংগঠিত ক্ষেত্রের ওপর আক্রমণ।