ভারতে সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে ছুটি
ভারতের অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা সিবিআইয়ের ক্ষমতার লড়াই এবার অন্য দিকে মোড় নিয়েছে। দেশটির শীর্ষ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে অন্তঃকলহের জের ধরেই এ রদবদল। সিবিআইয়ের পরিচালক অলোক ভার্মা ও বিশেষ পরিচালক রাকেশ আস্থানাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের অধীনে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তাকেও ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
জিনিউজের খবরে জানানো হয়, সিবিআইয়ের সদর দপ্তরের ১১ ও ১২তলায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। সিল করে দেওয়া হয়েছে ওই দুটি তলা। ওখানেই অলোক ভার্মা ও রাকেশ আস্থানার দপ্তর ছিল। ওই দুজন যাতে সিবিআইয়ের সদর দপ্তরে না ঢোকেন, তা দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অলোক ভার্মার জায়গায় অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন এম নাগেশ্বর রাও। এনডিটিভি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ১৯৮৬ সালের এই আইপিএস অফিসার এত দিন যুগ্ম পরিচালক পদে ছিলেন। সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়, নাগেশ্বর রাও সিবিআই পরিচালকের দায়িত্ব সামলাবেন।
‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেন।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতে, সিবিআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা দুজনকে সরানোর বিষয়ে চিফ ভিজিলেন্স কমিশনের (সিভিসি) কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁরা দুজন ওই পদে থাকলে যথাযথ তদন্ত সম্ভব নয় বলে সিভিসি জানায়। গতকাল দিল্লির হাইকোর্টে ওই দুজনকে নিয়ে নাটকীয় ঘটনার পর নরেন্দ্র মোদির সরকার তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল রাকেশ আস্থানা ও এ ঘটনায় সঙ্গে যুক্ত ডিসিপি দেবেন্দ্র কুমার আদালতের দ্বারস্থ হন। ঘুষের কাণ্ডে জড়িত রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে খোদ সিবিআই। সিবিআইয়ের এ পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের কাছে রাকেশ আস্থানা আরজি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে যেন দমনমূলক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। ঘুষের কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া সিবিআই কর্মকর্তা দেবেন্দ্রও আদালতের দ্বারস্থ হন। দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেন্দ্র মেনন ও বিচারপতি ভি কে রাওয়ের বেঞ্চে মামলা করেন ডিসিপি দেবেন্দ্রের আইনজীবী দয়ান কৃষ্ণন।
জিনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন দেবেন্দ্র কুমার। ঘুষের কাণ্ডে তথ্য বিকৃতি করার অভিযোগে গত সোমবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিবিআইয়ের স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এবং তাঁর অধীনেই তদন্ত চালাচ্ছিলেন দেবেন্দ্র কুমার। মইন কুরেশি মামলায় জড়িত হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী সতীশ সানা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে বয়ান দেন। তিনি অভিযোগ করেন, এ তদন্তে পাঁচ কোটি টাকার ঘুষ চেয়েছিলেন রাকেশ আস্থানা, যদিও রাকেশ আস্থানার পাল্টা অভিযোগের তির সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক ভার্মার দিকে। অলোক ভার্মাই আসলে দুই কোটি টাকা ঘুষ নেন সতীশ সানার কাছ থেকে।
সিবিআইয়ের দুই কর্মকর্তার বিবাদ এতটাই চরমে ওঠে, মধ্যস্থতা করতে বাধ্য হন নরেন্দ্র মোদি।
‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র তথ্য অনুযায়ী, শুনানির সময় সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে আস্থানা ও সিবিআইয়ের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ দেবেন্দ্রর সিংয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।
গতকাল দিল্লি উচ্চ আদালত জানিয়ে দিলেন সংস্থার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা রাকেশ আস্থানাকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যাবে না। রাকেশের ব্যাপারে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য হয়েছে ২৯ অক্টোবর। গতকাল নিজের ও সহকর্মী দেবেন্দ্র কুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন রাকেশ আস্থানা।