ভারতে শিশুদের টিকা দেওয়া হবে আগামী বছর
ভারতে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হলেও চলতি বছর তাদের টিকা দেওয়া যাবে না। ১২ বছরের নিচের সুস্থ শিশুদের টিকা দেওয়া হতে পারে আগামী বছরের মার্চ নাগাদ।
কেন্দ্রীয় সরকারের গড়ে দেওয়া কোভিড উপদেষ্টা কমিটির প্রধান এন কে অরোরা গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোমর্বিডিটি (অন্য অসুস্থতা) রয়েছে এমন শিশুদের আগে টিকা দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। তারপর সুস্থ শিশুদের।
ভারতে এই মুহূর্তে টিকাকরণ হচ্ছে ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সীদের। সম্প্রতি ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছে গুজরাটের জাইডাস ক্যাডিলা। তাদের তৈরি ‘জাইকভ ডি’ টিকা দেওয়া শুরু হবে অক্টোবর থেকে। কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকার ছাড়পত্র এখনো কেউ পায়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে সরকারকে বলা হয়েছে, তৃতীয় তরঙ্গের কথা মাথায় রেখে শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অবিলম্বে গড়ে তোলা দরকার।
অরোরা বলেছেন, চেষ্টা চলছে আগামী মার্চের মধ্যে শিশুদের প্রতিষেধকের বন্দোবস্ত করতে। সে ক্ষেত্রে কোমর্বিডিটি থাকা শিশুদের আগে চিহ্নিত করা হবে। কোন বয়সী শিশুর কী ধরনের কোমর্বিডিটি থাকলে আগে টিকা দেওয়া হবে, সেই তালিকা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানান, দেশে ১২-১৭ বছর বয়সী রয়েছে ১২ কোটি। এদের মধ্যে কোমর্বিডিটি আছে ১ শতাংশের। দেশে ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪৪ কোটি। এই বিপুলসংখ্যক শিশুর টিকাকরণ সহজ কাজ নয়।
ভারতে কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ শুরু হয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তাঁদের আশঙ্কা, অক্টোবর নাগাদ ওই ঢেউ শীর্ষে উঠবে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের অবশ্য ধারণা, দ্বিতীয় তরঙ্গের মতো তৃতীয় তরঙ্গ ততটা মারাত্মক হবে না। সংক্রমণের হার ও তীব্রতাও কম হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন বলেছেন, ভারত সম্ভবত এই অতিমারির ‘এন্ডেমিক’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই পর্যায়কে বলা যেতে পারে অতিমারির শেষের শুরু। তিনি বলেন, এই পর্যায়ে সংক্রমণের মাঝারি বা কম প্রভাব দেখা যাবে। সংক্রমণ একেবারেই হবে না, তা নয়। তবে হলেও তা গা সওয়া হয়ে যাবে।
কোনো কোনো রাজ্যে বিক্ষিপ্তভাবে সংক্রমণের প্রকোপ বৃদ্ধি হতে পারে। যেসব এলাকায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব কম হয়েছিল অথবা টিকা বেশি দেওয়া যায়নি, সেখানে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তবে দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো তৃতীয় ঢেউ তেমন সর্বব্যাপী হবে না বলে তাঁর ধারণা। সৌম্যার ধারণা, প্রকোপ কমবেশি যা-ই হোক, আগামী দিনে ভারতীয় সমাজকে করোনাভাইরাসের সঙ্গেই ঘর করা শিখতে হবে।
টিকা নেওয়ার পরও কত মানুষ কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন, তার কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। এ বিষয়ে রাজ্যগুলোকে তথ্য জানাতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার যে ৭৮ জনকে আফগানিস্তান থেকে ভারতে আনা হয়, তাঁদের মধ্যে ১৬ জন কোভিড আক্রান্ত বলে দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে।