ভারতে নির্বাচনী ব্যয় আমেরিকাকেও ছাড়িয়ে গেল!
এবারের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) খরচ করেছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি রুপি। আর সব দল মিলে খরচ করেছে ৩৩ হাজার কোটি রুপি, যা বিজেপির চেয়ে মাত্র ৬ হাজার কোটি রুপি বেশি। অর্থাৎ এবারের লোকসভা নির্বাচনে সব দল মিলে ব্যয় করেছে ৬০ হাজার কোটি রুপি।
নির্বাচনে ব্যয়ের দিক থেকে বিজেপির চেয়ে ঢের পিছিয়ে আছে কংগ্রেস। আর এবারের নির্বাচনে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যয় আমেরিকাকেও ছাড়িয়ে গেল। ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল ৪৫ হাজার কোটি রুপি।
সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টজ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি নির্বাচনী ব্যয়ের এই হিসাব প্রকাশ করেছে দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ (সিএমএস)। সংস্থাটির দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট নির্বাচনী ব্যয়ের ৪৫-৫০ শতাংশ ছিল বিজেপির দখলে। আর মোট ব্যয়ের মাত্র ১৫-২০ শতাংশ ছিল কংগ্রেসের। বলা হচ্ছে, ভারতের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিল সদ্য হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচন।
সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজের চেয়ারম্যান এন ভাস্কর রাও বলেছেন, এমন ধারা চলতে থাকে আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মোট ব্যয় ১ লাখ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে ব্যয়ের বিষয়টি ঘিরেই সব ধরনের দুর্নীতি আবর্তিত হয়। এই বিষয়কে যদি আমরা চিহ্নিত করতে না পারি, তবে দুর্নীতিও আটকানো যাবে না।’
চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়ে জয়ী হয়েছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের আসনসংখ্যা ৫২। সেখানে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট তিন শরও বেশি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণ জানা গেছে, লোকসভার যে ১৮৮টি আসনে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হয়েছে, তার মধ্যে ১৭৪টিতেই হেরেছে কংগ্রেস। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তাঁদের দল এবারের লোকসভা নির্বাচনে যে এত বিপুল জনসমর্থন পাবে, তা ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগেও কেউ ভাবতে পারেনি।
সিএমএসের দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের সব রাজনৈতিক দল মিলে মাত্র ৯ হাজার কোটি রুপি খরচ করেছিল। ২০০৪-এ ছিল ১৪ হাজার কোটি রুপি। ২০১৪ সালে বিজেপি যখন জেতে, তখন লোকসভা নির্বাচনে দলগুলোর মোট ব্যয় ছিল ৩০ হাজার কোটি রুপি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে তা এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
সিএমএস বলছে, এবারের নির্বাচনে ভারতের অনেক জায়গায় অর্থের বিনিময়ে ভোট কিনে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভোটারদের মধ্যে ভোটপ্রতি বিলি করা হয়েছে ১০০ থেকে দেড় হাজার রুপি। অনেক ভোটারদের ভোটের বিনিময়ে তীর্থস্থান ও বিদেশ সফরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করার নিত্যনতুন পদ্ধতি দেখা গেছে এবারের নির্বাচনে।
সিএমএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোট ব্যয়ের মাত্র ২০ শতাংশ ছিল বিজেপির। অন্যদিকে, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ ছিল কংগ্রেসের। এই বছরের নির্বাচনে সেটিই উল্টে গেছে। এবার সব দলের মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকেই করেছে বিজেপি।