ভারতে কেন অক্সিজেনের সংকট
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ভারতে অক্সিজেনের অভাব প্রকট রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে না অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ। সাত মাস আগে ঠিক একই ধরনের সংকটে পড়েছিল ভারত। কিন্তু বারবার একই সমস্যায় কেন পড়ছে দেশটি?
ভারতে কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে এক দিনে মৃত্যু ও সংক্রমণে রেকর্ড হচ্ছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এনডিটিভির খবরে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই বেড়েছে। এদিকে দিল্লিতেও করোনাভাইরাসে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেখানে গতকাল শুক্রবার ৩৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সাধারণত ভারতে স্বাস্থ্য খাতে অক্সিজেনের মোট সরবরাহের ১৫ শতাংশ ব্যয় হয়। বাকিটা শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশটির মোট অক্সিজেন সরবরাহের ৯০ শতাংশই স্বাস্থ্য খাতে দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন এ খাতে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন খরচ হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাজেশ ভূষণ। গত বছরের সেপ্টেম্বরের চাহিদার তুলনায় এটি তিন গুণ বেশি।
পুনেতে একটি কোভিড-১৯ হাসপাতাল পরিচালনা করেন চিকিৎসক সিদ্ধেশ্বর শিন্ডে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে আইসিইউ বেড না পাওয়ায় কিছু রোগীকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।’ সিদ্ধেশ্বর শিন্ডে বলেন, ‘সাধারণত আমাদের হাসপাতালে অক্সিজেনের যথেষ্ট সরবরাহ থাকে। কিন্তু এখন অক্সিজেন প্রয়োজন—এমন রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ২২ বছর বয়সী তরুণেরও এখন অক্সিজেন লাগছে।’
অক্সিজেনের সংকটে ভারতের হাসপাতালগুলোয় রোগীদের মৃত্যুও বেড়ে চলেছে। যেমন গতকাল দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ জন করোনা রোগী মারা গেছেন। অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য অক্সিজেনের সংকট মোকাবিলায় চেষ্টা চালাচ্ছে। জার্মানি থেকে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন তৈরির ২৩টি প্ল্যান্ট আনছে কেন্দ্রীয় সরকার।
গত বছরের অক্টোবরে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৬২টি নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। করোনার প্রথম ঢেউয়ের আট মাস পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত দিনে মাত্র ৩৩টি স্থাপিত হয়েছে
ভারতের কিছু রাজ্য অবশ্য এর মধ্যেই অক্সিজেনের যথেষ্ট মজুত গড়ে তুলতে পেরেছে। যেমন কেরালায় প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অক্সিজেনের মজুত আছে। সেখানে অক্সিজেনের উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। কেরালা এখন অন্যান্য রাজ্যেও অক্সিজেন পাঠাচ্ছে। কিন্তু দিল্লিসহ কিছু রাজ্যে নিজেদের অক্সিজেন তৈরির প্ল্যান্ট নেই। ফলে, এই রাজ্যগুলো অক্সিজেনের জন্য আমদানির ওপর মূলত নির্ভরশীল। এসব রাজ্যেই অক্সিজেনের সংকট বেশি।
গত বছরের অক্টোবরে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৬২টি নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। করোনার প্রথম ঢেউয়ের আট মাস পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত দিনে মাত্র ৩৩টি স্থাপিত হয়েছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ আরও ৫৯টি এবং মে মাসের শেষে আরও ৮০টি প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা রয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সঠিক ও জরুরি পরিকল্পনার অভাবেই ভারতে অক্সিজেনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতে কারখানা থেকে অক্সিজেন ট্যাংকারে ভরা এবং তা হাসপাতালে সরবরাহ করতেও সময় লাগছে অনেক। এ প্রক্রিয়ায় কিছু প্রযুক্তিগত জটিলতা আছে। এ কারণে প্রয়োজনের সময়ে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ভারতের অক্সিজেন তৈরির কারখানাগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে। তবে এর জন্য সরকারি অর্থসহায়তা চাইছে কারখানাগুলো। এমনই এক প্ল্যান্টের কর্মকর্তা রাজাভাউ শিন্ডে বিবিসিকে বলেন, ‘আগে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন হুট করে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেছে। কথায় আছে, তৃষ্ণার্ত হওয়ার আগে কুয়া খুঁড়তে হয়। কিন্তু আমরা তা করিনি।’