ভারতে কৃষক আন্দোলন ঠেকাতে দমন–পীড়ন

ভারতে আন্দোলনরত কৃষক এবং আন্দোলনের বিরোধিতাকারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় এক পুলিশ সদস্যকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করতে উদ্যত হন এক ব্যক্তি। আজ শুক্রবার দিল্লির সিংঘু সীমান্তের কাছে।ছবি: রয়টার্স

ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর মিছিল থেকে সংঘর্ষের পর শুরু হয়েছে নানা ধরনের দমন–পীড়ন। কৃষকেরা তো বটেই, রাষ্ট্রীয় মদদে এই পীড়ন থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না বিরোধী নেতা ও সাংবাদিকেরাও।

কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর ও সাংবাদিক রাজদীপ সারদেশাই, মৃণাল পান্ডেসহ ছয় বিশিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ট্রাক্টর মিছিলসংক্রান্ত ভুল খবর দিয়ে তাঁরা বিভ্রান্তি ও অশান্তি সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। উত্তর প্রদেশের নয়ডা ও মধ্যপ্রদেশের চারটি শহরে তাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে রাজ্য সরকার কৃষকদের গাজিপুর সীমান্ত খালি করে দিতে বলেছিল। আজ শুক্রবার জাতীয় পতাকা হাতে বেশ কিছু যুবক ওই স্থান অবরোধকারী কৃষকদের ওপর আক্রমণ চালান। তাঁরা তাঁবুতে ভাঙচুর চালান। ঢিল ছোড়েন। কৃষকদের সঙ্গে হাতাহাতিতে পুলিশের একাংশও জড়িয়ে পড়ে। মারপিটের সময় তলোয়ার ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করা হয়।
কৃষকদের অভিযোগ, অবরোধস্থলে খাবার পানির গাড়ি আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অথচ সেখানে বহিরাগতরা ঢুকে পড়ল কীভাবে। পুলিশি যোগাযোগ ছাড়া এটা সম্ভব নয়।

শুধু গাজিপুর নয়, টিকরি ও সিংঘু সীমান্তেও রাজ্য সরকারের মদদে কৃষক আন্দোলন ভাঙার অভিযোগ উঠছে। প্রজাতন্ত্র দিবসের বদনাম ঘুচিয়ে কৃষকেরাও নতুনভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছেন। সমর্থনও মিলছে। কিন্তু দিল্লি পুলিশ যেভাবে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাজাচ্ছে, দাঙ্গার অভিযোগ এনে গ্রেপ্তারের তোড়জোড় চালাচ্ছে, তাতে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও কৃষকদের সমর্থনে প্রবীণ গান্ধীবাদী আন্না হাজারে আগামীকাল শনিবার থেকে মহারাষ্ট্র রাজ্যে নিজের গ্রামে আমরণ অনশনে বসার কথা জানিয়েছেন।

কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এক দল ব্যক্তি। আজ শুক্রবার দিল্লির সিংঘু সীমান্তে।
ছবি: রয়টার্স

কৃষক আন্দোলনকে ঘিরে বিরোধীদলীয় সমর্থন এখনো অটুট। যদিও সরকার কঠোরতা বাড়াচ্ছে। আইন বাতিলের রাস্তায় হাঁটতে সরকার যে একেবারেই রাজি নয়, তা আজ সংসদের যৌথ বাজেট অধিবেশনের ভাষণে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণে স্পষ্ট। রাষ্ট্রপতি বলেন, নতুন এই আইনে ১০ কোটি কৃষক উপকৃত হবেন। রাষ্ট্রপতি সরকারের তৈরি ভাষণই পাঠ করেন। সেই ভাষণে লালকেল্লায় হাঙ্গামার তীব্র নিন্দা করা হয়। বিরোধীরা এই ভাষণ বর্জন করে কৃষি আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

কৃষক আন্দোলনে ভাঙন ধরাতে এর আগেও নানা তল্লাশি চালানো হয়েছিল। আয়কর হানা হয়েছে। আজ হলো সিবিআই তল্লাশি। পাঞ্জাবে চাল ও গম মজুত রাখা মোট ৪০টি গুদামে সিবিআই হানা দেয়।