ভারতে এক দিনে ৩ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত
ভারতে টানা তৃতীয় দিনের মতো করোনায় তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হলো। আর এক দিনে শনাক্ত হলেন ৩ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি করোনা রোগী। আজ শুক্রবার ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত ভারতে এক দিনে ৩ হাজার ৪৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা যান। অবশ্য আগের দিন বুধবার দেশটিতে করোনায় মারা যান ৩ হাজার ৬৪৫ জন।
সবশেষ মৃত্যুর এই সংখ্যা নিয়ে ভারতে করোনায় মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ২৫৫ জন।
গতকাল রাত ১১টা নাগাদ ভারতে এক দিনে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ভারতে আগে কখনো এক দিনে এত করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের কোনো দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে এত করোনা রোগী আগে কখনো শনাক্ত হয়নি। আগের দিন বুধবার ভারতে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ডটি ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
সবশেষ তথ্য নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫৫ হাজার ১২৬।
ভারতে টানা ৯ দিন ধরে তিন লাখের বেশি করে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। তার আগে ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটিতে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিলেন। আর টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা যাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল থেকে দৈনিক মৃত্যু তিন হাজারের বেশি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ কোটি ১১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৯। বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ৩১ লাখ ৭৯ হাজার ১৮৭ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৩০ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মোট মারা গেছেন ৫ লাখ ৮৯ হাজার ২০৭ জন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি সংক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত। ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লাখ ৯২ হাজার ৮৮৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪ লাখ ১ হাজার ৪১৭ জন।
ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানার পরিস্থিতিও অবনতিশীল।
গতকাল স্থানীয় সময় রাত ১১টা পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে ৬৬ হাজার ১৫৯, কেরালায় ৩৮ হাজার ৬০৭ জন ও উত্তর প্রদেশে ৩৫ হাজার ১৫৬ জনের।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। টিকা নিতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। তবে বিভিন্ন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকার মজুত নেই। ফলে ১ মে থেকে সব জায়গায় এই বর্ধিত টিকা কর্মসূচি শুরু করা সম্ভব না-ও হতে পারে।
দেশটিতে সংক্রমণের এই ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার সংকটসহ নানা সমস্যায় দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম।
দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। শুধু অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা গেছেন। বিদেশ ও দেশের অন্য এলাকা থেকে অক্সিজেন এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ভারতের করোনা সংকটে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা জরুরি চিকিৎসাসহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিদেশি সহায়তা ভারতে পৌঁছানো শুরু হয়েছে।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আরম্ভ হয়। দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনো পিক বা চূড়ায় উপনীত হয়নি। এ কারণে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা কবে নাগাদ নিম্নমুখী হতে পারে, সে সম্পর্কে দেশটির বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।