বিহারে অপরাধীদের হাতে হাতে একে-৪৭ রাইফেল
ভারতের বিহার রাজ্যে অপরাধীদের হাতে ছড়িয়ে পড়ছে পাচার হওয়া একে-৪৭ রাইফেল। কুয়া, নালা, পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি, বালুর নিচে পাওয়া যাচ্ছে এই অস্ত্র। বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে একে-৪৭। পুলিশ বলছে, অস্ত্র পাচারে ভারতের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন সদস্য জড়িত।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বিহারের অপরাধী চক্রের হাতে ছড়িয়ে পড়ে একে-৪৭ রাইফেল। ১৯৯৫ সালে প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলা থেকে লাটভিয়ান উড়োজাহাজে করে করে এগুলো বিহারে এনে ফেলা হয়।
২০১২ সালে জব্বলপুরে সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল অরডিন্যান্স ডিপো থেকে কিছু রাইফেল চুরি যায়। অপরাধীদের মধ্যে একে-৪৭ রাইফেল ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এখন বিহার, মুঙ্গের, মোজাফফরপুর এবং অন্যান্য এলাকাতেও এই অস্ত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
কীভাবে রাইফেল অপরাধীদের কাছে যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ তৌফির, মোহাম্মদ ইরফান, শমসের আলম ও রিজওয়ান। তাঁদের গ্রামে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ করছে।
মোজাফফরপুরের সাবেক মেয়র সমীর কুমার ও তাঁর গাড়িচালককে গত সেপ্টেম্বর মাসে গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয়। জেলার এসএসপি হরপ্রীতকাউর বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে একে-৪৭ রাইফেল ব্যবহার করা হয়েছিল। একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয় গত ১২ মে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা দিনা গোপকে পাটনায় একে-৪৭ রাইফেল ব্যবহার করে হত্যা করা হয়। গত বছরের ৩ জুলাই দুজন অপরাধী পূর্ব চম্পারান এলাকার একটি স্কুলে এই অস্ত্র ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ করে।
ভারতের পুলিশ বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, যেকোনো মূল্য কারও হত্যা নিশ্চিত করতে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
বিভিন্ন রাজ্যে অস্ত্র পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করার পর মোজাফফরপুরে হত্যাকাণ্ড হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য পুরুষোত্তম রাজাক বলেন, ২০১২ সাল থেকে জব্বলপুরে সেনাবাহিনীর অরডিন্যান্স ডিপো থেকে কমপক্ষে ৬৩টি একে-৪৭ রাইফেল পাচার করা হয়েছে।
পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে একে-৪৭ ও একে-৫৬ রাইফেল পাচারের তথ্য পুলিশের কাছে আছে। এই রাইফেলগুলোর দাম ছয় লাখ থেকে আট লাখ রুপি। জব্বলপুর থেকে বিহারে এই অস্ত্রগুলো পাচার করা হচ্ছে বলে পুলিশের সন্দেহ। অন্য রাজ্যে এগুলো বিক্রি হচ্ছে। বিহারে পাচার করা অস্ত্রের ভালো বাজার রয়েছে। মুঙ্গের পাচার করা অস্ত্রের মূল ঘাঁটি।
মুঙ্গের পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স বরোদা থেকে ১২টি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করেছে। মুঙ্গেরের পুলিশ সুপার (এসপি) বাবু রাম বলেন, কুয়ার মধ্যে সেগুলো লুকানো ছিল। গত ২৯ আগস্ট থেকে মুঙ্গের পুলিশ ২০টি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করেছে। পাঁচজন অস্ত্র পাচারকারীকে আটক করেছে। জব্বলপুরে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অস্ত্র তত্ত্বাবধায়ক রাজাক রয়েছেন।
জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্র পাচারের সঙ্গে বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জড়িত।