ফেরি করে পণ্য বিক্রেতা থেকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সিইও হওয়ার গল্প
এ গল্প সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার। গল্পটি অর্জনের। সংকটময় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সফলতার শিখরে পৌঁছানোর গল্প। রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা সেই ব্যক্তি এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তিনি শ্রীধর বেভারা। বড় ভাইয়ের স্মরণে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করেন তিনি। জীবনে অনেক কষ্ট ও উত্থান-পতন দেখে আসা বেভারার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তাঁর ওই ভাই।
শ্রীধর বেভারার জীবন নানা প্রতিকূলতায় পূর্ণ। বহুবার দিকে দিকে বাঁক নিয়েছে তাঁর জীবন। কিন্তু থেমে থাকেননি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে জন্ম নেওয়া এই তরুণ উদ্যোক্তা। প্রদেশটির ভিজিয়ানাগারাম জেলার ভানতারা গ্রামের শ্রীধর সফলতার চূড়ায় পৌঁছেছেন। তবে সংগ্রামের দিনের কথাগুলো ভুলে যাননি। ওই সময় যাঁরা নানাভাবে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি এখনো পূর্ণ কৃতজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কারণ এসব মানুষই তাঁকে তাঁর সহজাত ক্ষমতাটা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন।
বাড়িতে কাজের চাপ আর কঠিন পরিস্থিতির কারণে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু নিজের দৃঢ়সংকল্প থেকে সরে আসেননি শ্রীধর। ১৯৯৮ সালের মার্চে স্নাতক শেষ করেন। চাকরি শুরু করলেও কিছুদিন পর ছেড়ে দেন। কঠোর পরিশ্রম শুরু করে দেন আবার। এর ফলও অবশ্য পান তিনি। গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হন শ্রীধর বেভারা।
এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকটি কোম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। ১০ বছরের মাথায় পান প্যানাসনিক করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব। শ্রীধর এখন বিএমআর ইনোভেশনস নামের দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানির সিইও। ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি পরামর্শদাতা এই কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে শাখা রয়েছে। তাঁর লেখা ‘মোমেন্ট অব সিগন্যাল’ ও ‘দ্য রোরিং ল্যাম্বস’ আন্তর্জাতিকভাবে সর্বাধিক বিক্রীত ও জনপ্রিয় দুটি বই। লিডারশিপ ও বিজনেস নিয়ে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে লেখালেখি করেন শ্রীধর। এ ছাড়া তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (মাদ্রাজ) পরামর্শক।
শ্রীধরের জীবন ফুলের সাজানো বাগান ছিল না। দীর্ঘ সময় ধরে অর্থকষ্টে জীবন পার করেছে তাঁর পরিবার। দুই দিক থেকে কুলিয়ে ওঠার জন্য নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে শ্রীধরকে। দুবেলা খাবারের জন্য কখনো রাস্তায় বসে বা ঘরে ঘরে গিয়ে দুধ বিক্রি করেছেন তিনি। শহরে গিয়ে মুরগির দোকানে সহযোগীর কাজও করেছেন।
শ্রীধর বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের কথা। শহরে তাজ রেসিডেন্সি নামের এক হোটেলে পরিচারকের চাকরির জন্য আমার সাক্ষাৎকার ছিল। কিন্তু পরার মতো কোনো পোশাক ছিল না। এক বন্ধুর কাছ থেকে তার জামাকাপড় আর জুতা ধার করে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। ওই দিনের অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তখন হোটেলে দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতাম। মাঝেমধ্যেই সেখানে জনপ্রিয় লোকজন, ক্রিকেটার আর বিদেশিরা আসতেন।’
বড় ভাই বেভারা মুরালিধারা রাও সব সময় বেভারাকে সাহায্য করেছেন। উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার সঙ্গে দিয়েছেন পরামর্শ। কিন্তু ১৯৯৭ সালে তাঁর এই ভাই বোন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাঁর পরিবার অকূলপাথারে পড়ে। কিন্তু মনোবল হারাননি শ্রীধর। বড় ভাইয়ের স্মরণে তিনি দাতব্য কাজের জন্য বিএমআর ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। ছাত্রদের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উদাহরণ দিয়ে নেতৃত্ব তৈরির জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন শ্রীধর।