প্রিয়াঙ্কা-জাদুর ঝলক দেখল লক্ষ্ণৌ
রীতিমতো ঝড় তুলে উত্তর প্রদেশ অভিযান শুরু করলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। আজ সোমবার দুপুরে বড় ভাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে পাশে নিয়ে লক্ষ্ণৌ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর যা ঘটল, তাকে উন্মাদনা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। বিমানবন্দর থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দপ্তরের রাস্তাজুড়ে কংগ্রেসের মরা গাঙে ঢেউ তুলে রাহুল-প্রিয়াঙ্কার রোড শো এটুকু বুঝিয়ে দিল, রাজনীতির নতুন মেরুকরণের লক্ষ্যে তাঁরা আসরে নেমেছেন।
আজ বেলা একটার দিকে দিল্লি থেকে লক্ষ্ণৌ আসেন রাহুল, প্রিয়াঙ্কা ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। উত্তর প্রদেশকে পূর্ব-পশ্চিমে ভাগ করে প্রিয়াঙ্কা ও জ্যোতিরাদিত্যকে দায়িত্ব বুঝিয়ে রাহুল বলেছিলেন, কংগ্রেস ফ্রন্ট ফুটে খেলবে বলেই দুজনকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কংগ্রেস দপ্তর, দীর্ঘ প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথজুড়ে আজ দিনভর যা হলো; তাতে স্পষ্ট যে কংগ্রেস এই জনজোয়ারের প্রতিফলন ভোট বাক্সে ঘটাতে পারলে রাজ্য রাজনীতির চালচিত্রে অন্য রঙের পোঁচ পড়বে।
বিমানবন্দরের বাইরে রাখা ছিল একটা বাস। বাসের সামনের কাচের ওপর লাল কালিতে বড় বড় করে হিন্দিতে লেখা ‘স্বাগতম’। বাসের ছাদ রেলিং দিয়ে ঘেরা। সেই রেলিংয়ের ঘেরাটোপে ঠায় দাঁড়িয়ে জনজোয়ারের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করলেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁর পরনে হাল্কা সবুজ-সাদা কুর্তা ও সাদা সালোয়ার। সাদা ওড়না গলায় উত্তরীয়র মতো আলগোছে ফেলা। রাহুলের পরনে সাদা কুর্তা ও পায়জামা। তাঁর পাশে জ্যোতিরাদিত্য। সামান্য পেছনে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি রাজ বব্বর ও আরও কেউ কেউ। বাসের সামনে গোলাপি জামা পরা ‘প্রিয়াঙ্কা সেনা’র কয়েক শ সেনানী। তাঁদের জামার বুকে প্রিয়াঙ্কার ছবি। হিন্দিতে লেখা, ‘দেশের সম্মানে আজ প্রিয়াঙ্কা ময়দানে নেমেছেন। মান দেব, সম্মান দেব। প্রয়োজনে দেব জীবন।’
জনসমুদ্র ঠেলে বাস এগোতে থাকে ইঞ্চি ইঞ্চি। দুই ধার থেকে উড়ে আসতে থাকে ফুলের মালা ও গোলাপের পাপড়ি। হাসি মুখে কখনো জোড় হাত করে, কখনো বা হাত নেড়ে জনতার অভিনন্দন গ্রহণ করলেন তাঁরা। ভিড়ের কারও হাতে পোস্টার। সেখানে স্থান পেয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর ছবিও। উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি ও ব্যান্ডের ক্যাকোফনিতে কান পাতা দায়। পাগলের মতো নাচতে থাকেন কংগ্রেসের কর্মীরা। তাঁদের মুখে স্লোগান। বহু বছর পর চনমনে হয়ে ওঠার মতো একটা কারণ যেন খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। এ এক নতুন উৎসব। সমর্থকদের প্রবল আগ্রহে রাহুলকে সংক্ষিপ্ত ভাষণও দিতে হয়। বলেন, ‘কংগ্রেসের আদর্শে বিশ্বাসী এমন সরকার উত্তর প্রদেশে গড়ে তুলতে হবে। এটাই আমরা চাই। প্রিয়াঙ্কা ও জ্যোতিরাদিত্যর দায়িত্বও সেটাই। কাজেই শুধু লোকসভা নয়, বিধানসভার ভোট নিয়েও আপনাদের ভাবতে হবে। রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা স্বস্তি পাব না।’
প্রিয়াঙ্কা দলের দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি হয়েছে। নাম ‘শক্তি অ্যাপ’। শুরু করেছেন নিজের টুইটার হ্যান্ডেলও। সেই অ্যাপ মারফত প্রিয়াঙ্কা গতকাল রোববার বলেন, ‘নমস্কার, আমি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। কাল আমি লক্ষ্ণৌ আসছি। আসুন, সবাই মিলে নতুন এক রাজনীতির ধারা আমরা শুরু করি। সেই রাজনীতিতে অংশ নেবেন সবাই। সবাই অংশীদার। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতির বদল ঘটুক।’
লক্ষণীয়, সংক্ষিপ্ত ভাষণে বিজেপির বিরুদ্ধাচরণ ছাড়া কংগ্রেস নেতারা অন্য কারও সমালোচনা করেননি। বিজেপির বিরোধিতাই যে কংগ্রেসের ধর্ম, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, তা বোঝাতে এক সময় রাহুলের হাতে রাফাল যুদ্ধবিমানের মডেল দেখা যায়। স্লোগান ওঠে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’। কংগ্রেসের আদর্শে বিশ্বাসী সরকার গড়ার কথা বলার মধ্য দিয়ে বিজেপিবিরোধীদের প্রতিও তাঁরা প্রচ্ছন্ন এক ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এমন নয়, রাহুল-প্রিয়াঙ্কা এই প্রথম উত্তর প্রদেশে রোড শো করলেন। আমেথি ও রায়বেরিলিতে তাঁরা আগে একাধিকবার রোড শোয়ে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু গান্ধী পরিবারের খাসতালুকের বাইরে এই প্রথম। উদ্দীপনা ও উৎসাহও তাই অতীতকে ছাপিয়ে গেছে। ইলেকট্রিক তারের জন্য বাস ছেড়ে এক সময় তাঁদের মোটর গাড়ির ছাদে পা মুড়ে বসতে হয়। শহরের এক চকে তাঁরা চা-ও পান করেন। তাঁদের ঘিরে থাকেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা।
রাজ্য রাজনীতির খবর, এই রোড শোয়ের পর কংগ্রেস সম্পর্কে জোটবদ্ধ দুই শিবির সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির মনোভাবের পরিবর্তন ঘটতে পারে। কংগ্রেসকে জোটে নেওয়ার ভাবনা প্রাধান্য পেতে পারে।
রাহুল আগামীকাল মঙ্গলবার দিল্লি ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা লক্ষ্ণৌ থাকবেন আরও দুই দিন।