ভারতে লকডাউনের মাসপূর্তি ঘটল আজ ২৩ এপ্রিল। এই এক মাসে করোনার মোকাবিলায় ভারত সাফল্যের সঙ্গে এগোতে পেরেছে বলে বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে দাবি জানানো হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের করোনা মোকাবিলা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সন্দেহ হলেই জনগণ যেন ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং দেরি না করে পরীক্ষা করান। এতে রোগমুক্তি শুধু দ্রুতই হবে না, করোনা ছড়ানোর প্রবণতাও কমে যাবে।
কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এক মাস আগে দেশে যতটা প্রস্তুতি ছিল, আজ তা বহুগুণ বেড়ে গেছে। ২৩ মার্চ রাত ১২টায় লকডাউন শুরু হওয়ার সময় দেশে পরীক্ষা করা হয়েছিল মাত্র ১৪ হাজার ৯১৫ জনকে। করোনা আক্রান্ত ছিলেন ৪০০ জন। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ৫ লাখ মানুষকে। পজিটিভ রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২১ হাজার। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য সি কে মিশ্র এই তথ্য দিয়ে বলেন, সরকারের লক্ষ্য মৃত্যুর সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলা। সুখের কথা সেই লক্ষ্যে সরকার সফল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৮১। আক্রান্ত ২১ হাজার ৩৯৩ জন।
লকডাউনের এই এক মাসে সরকার যুদ্ধকালীন তৎপরতার ভিত্তিতে কাজ করেছে জানিয়ে বলা হয়, দেশে এই মুহূর্তে ৩ হাজার ৭৭৩টি হাসপাতাল করোনার চিকিৎসার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে। আইসোলেশন শয্যার সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার। এক মাস আগে যেখানে করোনা পরীক্ষা করা হতো দেশের মাত্র ১০০টি ল্যাবে, এক মাস পর সরকারি ও বেসরকারি স্তরে তা বেড়ে হয়েছে ৩২৫। ল্যাবের সংখ্যা বৃদ্ধি, সচেতনতা ও চিকিৎসার দৌলতে সুস্থতার হার বেড়ে হয়েছে ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বলা হয়, রোগের ওষুধ না থাকায় অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটরের ওপর নির্ভর করে রোগীর দেখভাল করা হচ্ছে। করোনার প্রসার রোধ করা গেছে। দেশের করোনাক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে ৭৮ টিতে গত ১৪ দিনে একজনের শরীরেও এই রোগ ধরা পড়েনি।
ভারতে মোট জেলা ৭২০ টি। এর মধ্যে ৪২৬ জেলায় কোনো না কোনো সময়ে করোনার সংক্রমণ দেখা গেছে। ২৯৪ জেলা এখনো করোনা মুক্ত।
একদিকে বেহাল অর্থনীতি, অন্যদিকে করোনার মোকাবিলায় কোষাগারের ওপর প্রবল চাপ। এই দুয়ের সমবেত মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার আজ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বর্ধিত মহার্ঘ ভাতা আগামী দেড় বছর দেওয়া হবে না। দেড় বছর পর বর্ধিত হারে ভাতা দেওয়া হলেও এই দেড় বছরের বকেয়া দেওয়া হবে না। পেনশনপ্রাপ্তরাও এই আওতায় পড়বেন। রাজ্য সরকাররাও এই নীতি নিলে মোট ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীর সংখ্যা সাড়ে ৪৮ লাখ। পেনশনভোগী সোয়া ৬৫ লাখ।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের ঠিক আগের দিন কেরালা সরকার রাজ্যের সব সরকারি কর্মীর এক মাসের বেতন কম দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬ দিনের বেতন কাটা হবে। পাঁচ মাসে কম পাওয়া যাবে ৩০ দিনের বেতন। ওই টাকা রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় খরচ হবে।
লকডাউনের এই এক মাস সরকারি যাবতীয় সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে দেশের বিরোধীরা। যে কংগ্রেস এই দুর্দিনে সরকারের পাশে থাকার কথা বারবার জানিয়েছে, লকডাউনের মাসপূর্তির দিন সেই কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সরকারের সমালোচনায় মুখর হলেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবার যখন এক জোট হয়ে মোকাবিলায় নামা উচিত, বিজেপি তখন সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতার ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অবনতি ঘটছে। এই ক্ষতি মেটাতে কংগ্রেস কঠোর পরিশ্রম করবে। দলীয় বৈঠকে সোনিয়া বলেন, বিজেপি আমাদের পরামর্শ নিচ্ছে না। তাদের যতটা উদার ও তৎপর হওয়া উচিত ছিল দুর্ভাগ্যবশত তা তারা হতে পারেনি।
বিজেপি অবশ্য দেরি না করে সোনিয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, সরকার কোনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন করছে না। সবাইকে নিয়ে এক জোট হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। সোনিয়ার উচিত এই কঠিন সময় সস্তার রাজনীতি না করা।