পুলিৎজার পেলেন কাশ্মীরি তিন সাংবাদিক
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর গত বছরের আগস্ট থেকে অবরুদ্ধ। কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর বিক্ষোভ থামাতে পুরো রাজ্যকে কার্যত গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। বিদেশি সাংবাদিকদেরও রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। দেশীয় সাংবাদিকদের গতিবিধি ছিল নিয়ন্ত্রিত। সব সময় নিরাপত্তারক্ষীদের রক্তচক্ষুর আড়ালে কাজ করতে হতো তাঁদের। কিন্তু সেসব উপেক্ষা করেও ভূস্বর্গের বন্দিদশার ছবি তুলেছিলেন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) তিন চিত্রসাংবাদিক।
অবরুদ্ধ কাশ্মীরের ছবি ক্যামেরায় ধারণ করে ২০২০ সালের পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছেন জম্মু-কাশ্মীরের সেই তিন আলোকচিত্র সাংবাদিক। তাঁরা হলেন দার ইয়াসিন, মুখতার খান ও চান্নি আনন্দ। তিনজনই এপিতে কর্মরত। তাঁরা ফিচার ফটোগ্রাফিতে এ পুরস্কার পান।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা রহিত করেন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। তাতে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা চড়াও হন। এসব দৃশ্য লুকিয়ে ক্যামেরাবন্দী করেন এপির এই তিন সাংবাদিক।
পুলিৎজার কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আড়ালে থেকে কাশ্মীরে সামরিক অভিযান ও প্রাত্যহিক জীবনের ছবি তুলেছেন ওই তিনজন।
ভারতের এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও কাশ্মীরের রাজনীতিবিদ ওমর আবদুল্লাহ তিন ফটোসাংবাদিককে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাহুল এক টুইটে বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের শক্তিশালী জীবনের চিত্রের মাধ্যমে পুলিৎজার পুরস্কার জয়ের জন্য ভারতীয় ফটোসাংবাদিক দার ইয়াসিন, মুখতার খান ও চান্নি আনন্দকে অভিনন্দন। আপনারা আমাদের সকলকে গর্বিত করেছেন।’
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘কাশ্মীরের সাংবাদিকদের জন্য এটি একটি কঠিন বছর। আসলে গত ৩০ বছর বিবেচনা করলেও তা সহজ ছিল না। সম্মানজনক পুরস্কার অর্জনের জন্য তিনজনকে অভিনন্দন। আপনাদের ক্যামেরায় আরও শক্তিশালী হোক।’
আমেরিকার জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুলিৎজার পুরস্কার সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ হিসেবে খ্যাত। ২১টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রথমে শুধু সংবাদপত্রকে এই পুরস্কার দেওয়া হতো। পরে অনলাইন জার্নালিজম, সাহিত্য, সংগীত, ফটোগ্রাফি, কবিতাকে যুক্ত করা হয়।
ভারতের নিউজ১৮ জানায়, ২০১৯ সালে ৫ অগাস্টে জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর দীর্ঘদিন কাশ্মীর লকডাউন ছিল। এমনকি ফোন, ইন্টারনেট পর্যন্ত ছিল না। কাশ্মীরের খবর বাইরের জগৎ পায়নি। সেই ছাইচাপা আগুনে কাশ্মীরের ছবি তুলেছিলেন এই তিন সাংবাদিক। তিনজন সেই সময় কাশ্মীর পরিস্থিতির ছবি তুলবেন বলে অচেনা কারও বাড়িতে গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন অশান্তিপ্রবণ এলাকাগুলোয়। ক্যামেরাকে লুকিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে সেই ছবিগুলি তুলেছিলেন। কিন্তু ছবি তুলে তো অফিসে পাঠাতে হবে। ইয়াসিন ও মুখতার তাই সোজা চলে যেতেন বিমানবন্দরে। কাশ্মীরি যাত্রীদের অনুরোধ করতেন ছবিগুলো পৌঁছে দিতে। পেনড্রাইভ, ডিস্ক সব দিয়ে দিতেন। সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিরা দিল্লি বিমানবন্দরে সেগুলো নিতেন। নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে তাঁদের কাজ করতে হয়েছে।
কষ্টকর এই কাজের জন্য মানুষ কাশ্মীরের নাটকীয়তা দেখার সুযোগ পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এপির তিন সাংবাদিক। এবার করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ইউটিউব লাইভের মাধ্যমে পুলিৎজার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
নিজেদের ওয়েবসাইটে পুলিৎজার কর্তৃপক্ষ বলছে, হিমালয় অঞ্চলের বিতর্কিত ভূখণ্ডে মানুষের জীবনের নির্মম চিত্র তুলে ধরায় কাশ্মীরি আলোকচিত্রীদের পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।