পশ্চিমবঙ্গে চলছে দল ভাঙা-গড়ার খেলা
ভারতের লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে দল ভাঙা-গড়ার খেলা। এত দিন এই খেলায় তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও এবার নতুন করে সঙ্গী হয়ে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপিও। বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় শক্তিশালী দল। মমতা যেমন কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম দলের নেতাদের ভাগিয়ে নিজের দলে নিয়েছেন, তেমনি বিজেপিও এবার মমতার পথ ধরে দল ভাঙা-গড়ার খেলা শুরু করেছে।
মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেস আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের ৪২ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত দুই নেতার বিদ্রোহের খবর মিলেছে। এর মধ্যে একজন রয়েছেন ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং। দল ভাঙা-গড়ার খেলায় শামিল হয়েছেন বিজেপি ও তৃণমূলের বেশ কজন নেতা। এর ফলে বিজেপি ও তৃণমূলে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবারই তৃণমূল সাংসদ অনুপম হাজরা যোগ দেন বিজেপিতে। এর আগে যোগ দেন আরেক সাংসদ সৌমিত্র খান।
অন্যদিকে, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন উত্তর মালদহের কংগ্রেসের সাংসদ বেনজির মৌসুম নূর। তিনি ওই একই আসনে এবার লড়ছেন তৃণমূলের টিকিটে। পাশাপাশি আরও তিন কংগ্রেস বিধায়ক অপূর্ব সরকার, আবু তাহের খান ও কানাইয়ালাল আগরওয়াল যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। ইতিমধ্যে তাঁরা সাংসদ পদে লড়াই করার জন্য তৃণমূলের টিকিটও পেয়েছেন। বহরমপুরে লড়ছেন অপূর্ব সরকার, মুর্শিদাবাদ আসনে লড়ছেন আবু তাহের খান আর রায়গঞ্জ আসনে লড়ছেন কানাইয়ালাল আগরওয়াল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানী দিল্লিতে গিয়ে উত্তর ২৪ গরগনা জেলার ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং দলবল নিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন ২৩ জন পৌর কাউন্সিলর। এদিন অর্জুন সিংকে বরণ করে নেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়। অর্জুন সিং উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের বিধায়ক। তিনি ৩০ বছর ধরে মমতার সঙ্গে রয়েছেন। এলাকার একজন নামী নেতা। চারবার হয়েছেন বিধায়ক। এবার তিনি চেয়েছিলেন ব্যারাকপুর সংসদীয় আসনের প্রার্থী হতে। কিন্তু মমতা ওই আসনে প্রার্থী করেছেন দীনেশ ত্রিবেদীকে। এতেই ক্ষুব্ধ হন অর্জুন সিং। মমতা অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকও করেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে অর্জুন সিং বিজেপিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন।
অর্জুন সিং বিজেপিতে যাচ্ছেন, এই খবর পেয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘দু-একজনের প্রার্থী হওয়ার লোভ আছে। যারা যেতে চায়, তারা গেলে বেঁচে যাই। কে গেল, ওরা কাকে নিল, তাতে আমার কিছু আসে-যায় না। আমি অনেককে বলে দিয়েছি, যা, মুক্ত করে দিচ্ছি। টাকা নিয়ে যারা দল ভাঙায় তাদের নিন্দা করি।’
দিল্লির বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করে অর্জুন সিং বলেছেন, ‘পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা এবং এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে মমতার মন্তব্য আমাকে আঘাত করেছে। তাই আমি তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ বলেন, ‘এই দলের সঙ্গে আর আমার কাজ করা সম্ভব নয়। মমতার মা, মাটি আর মানুষ এই তিন “এম” এখন হয়ে গেছে মানি, মানি আর মানি। অর্জুন সিংয়ের দলে যোগদানের পর মুকুল রায় বলেছেন, ‘এটা তো ট্রেলার চলছে। আসল সিনেমা এখনো বাকি।’ আর কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘বাংলায় এবার মোদির সমর্থনে ঝড় উঠেছে।’
কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ‘যে রাজনৈতিক নোংরা খেলায় দিদি কংগ্রেস দলকে ভেঙেছে, এবার সেই একই খেলায় বিজেপি-তৃণমূল ভাঙছে। আমি আগেই বলেছিলাম দিদিকে এই খেলার শিকার হতে হবে। কারণ দিদির রাজনৈতিক পাপ দিদিকে ছাড়বে না। এই দিদিই ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ভেঙে গড়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস।’
রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘দল ভেঙে আসাদের নিয়েই তো তৃণমূল। উনি তো কংগ্রেস ভেঙে দিলেন। কোন মুখে নীতির কথা বলছেন উনি? ধার করা মাল নিয়ে ঘর করলে ঝড় এলে সেই ঘর টোকে না। তৃণমূল দলটাই ধার করা। অন্যের ঘর ভাঙলে নিজের ঘরও ভেঙে যায়—এ কথাটি মনে রাখতে হয়।’ বলেন, বিজেপির থেকেও খারাপ দল এই তৃণমূল।
একসময় বিজেপির নেতা মুকুল রায় ছিলেন মমতার ডান হাত। রাজনৈতিক কারণে মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। কিন্তু তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু রায় এখনো রয়েছেন তৃণমূলে। তিনি আবার তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার বিজপুরের বিধায়ক।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুকুলপুত্র বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত দিন দলনেত্রী, তত দিন আমি তৃণমূলেই আছি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর দলের দায়িত্বভার যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে অর্পণ করা হয়, তাহলে তাঁকেই নেতা মানব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতা হিসেব যাঁকে বসিয়ে দেবেন, আমি তাঁকে নেতা বা নেত্রী হিসেবে মানব; সে দিলীপ ঘোষ হোক বা সুজন চক্রবর্তী হোক।’
শুভ্রাংশু এ কথাও বলেন, তিনি ব্যারাকপুর আসনে অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রচারে নামবেন। প্রচার করবেন তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদির হয়ে। বলেন, তাঁর বিজপুর আসন থেকে তিনি ৯৮ হাজার ভোটে লিড দেবেন দীনেশ ত্রিবেদিকে।