জ্ঞানবাপি মসজিদে নামাজ বন্ধ নয়
ভারতের বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদে মুসলমানদের প্রবেশ ও নামাজ পড়ায় কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ জারির পাশাপাশি জানিয়েছেন, ওই মসজিদে অজুর জন্য নির্দিষ্ট পুকুরে তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গ’ (মতান্তরে ফোয়ারা) পাওয়ার যে দাবি করা হয়েছে, তার সত্যতা বিচারের জন্য শুধু ওই স্থানের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু সে জন্য মুসলমানদের মসজিদে প্রবেশে যেন বাধা দেওয়া না হয়। নামাজেও কোনো বাধা সৃষ্টি চলবে না।
বারানসি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র। সেখানে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরসংলগ্ন জায়গায় অবস্থিত জ্ঞানবাপি মসজিদ। সেই মসজিদের একটি দেয়ালের বাইরের অংশে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি খোদিত রয়েছে, যেখানে বছরের একটি দিন হিন্দুরা পূজা করেন। সেসব বিগ্রহের বছরভর পূজা করার দাবিতে যে মামলা দায়ের হয়েছে, তাতে স্থানীয় দেওয়ানি আদালত মসজিদ চত্বরের ভিডিওগ্রাফসহ ও জরিপের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্দেশ ১৯৯১ সালের ‘প্লেসেস অব ওরশিপ অ্যাক্ট’–এর পরিপন্থী বলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। গতকাল সেই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি এস নরসিংহের এজলাসে। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।
বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নির্দেশে বলা হয়, মুসলমানদের ধর্মাচরণে অজু করা আবশ্যিক। তা করতে বাধা দেওয়া যাবে না। বারানসির জেলা শাসককে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা তাঁকে করতে হবে, কিন্তু সে জন্য মুসলমানদের প্রবেশ ও নামাজে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না।
বারানসির সিভিল কোর্ট মসজিদে মাত্র ২০ জন মুসলমানের প্রবেশের যে বিধি আরোপ করেছিল, সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, সংখ্যা বাধ্যতামূলক নয়। কাউকে নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য নিম্ন আদালতের শুনানি বা কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেননি।
মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংসদ ‘প্লেসেস অব ওরশিপ অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার দিন উপাসনালয়ের চরিত্র যেমন ছিল তেমনই বহাল থাকবে। কোনো রকম অদল–বদল ঘটানো যাবে না। মসজিদ ভেঙে মন্দির বা মন্দির ভেঙে মসজিদ অথবা অন্য কোনো উপাসনালয় নির্মাণ করা যাবে না। ওই আইনে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল অযোধ্যা। মসজিদ কর্তৃপক্ষের আইনজীবী হুজেফা আহমদির আবেদন, বারানসির সিভিল কোর্ট কেন্দ্রীয় আইনের ওই নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে।
অযোধ্যা মামলার সঙ্গে এই মামলার পার্থক্য, অযোধ্যার মালিকানা দাবি করা হয়েছিল হিন্দুদের পক্ষ থেকে। এই মামলার প্রাথমিক দাবি শুধু পূজার অধিকার নিয়ে।