কেজরিওয়াল এবার পশ্চিমবঙ্গমুখী, শঙ্কায় তৃণমূল?
দিল্লি থেকে পাঞ্জাব। এরপর কি পশ্চিমবঙ্গ? আজ রোববার কলকাতায় আম আদমির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পদযাত্রাকে ঘিরে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর কেজরিওয়ালের এই আগমন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রসকেও ভাবনায় ফেলেছে, তা নেতাদের কথায়ই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজ্যের বাইরে দলের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিতে তৃণমূলের স্বপ্ন সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটের ফলাফলে চুরমার হয়ে যায়। এখন নিজ রাজ্যে কেজরিওয়ালের হানায় সত্যিই শঙ্কায় দলটি।
সর্বভারতীয় রাজনীতি নিয়ে গত বছর বিশেষ করে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপিকে হটিয়ে বিপুল জয়ের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোচ্চার ছিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। লক্ষ্য ছিল, যেভাবেই হোক, তৃতীয়বারের জন্য আর মোদিকে দিল্লির গদিতে বসানো যাবে না।
এবারের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হটিয়ে মোদি-কংগ্রেসবিরোধী একটি জোট গঠনের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে তৃণমূল। তৃণমূলের নেতারাও দাবি তোলেন, বিজেপিবিরোধী দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যে মমতার দল বিভিন্ন সভা–সমিতিতে মমতাকে দেশের বিরোধী জোটের নেত্রী হিসেবে উপস্থাপন করে প্রচার চালাতেও শুরু করে। তাতে প্রচুর সাড়াও পায় তৃণমূল। দলের বিস্তৃতি ঘটানোর জন্য মমতা টার্গেট করেন দেশের তিনটি ছোট রাজ্যকে—ত্রিপুরা, গোয়া ও মণিপুরকে।
কারণ, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া মণিপুর রাজ্যে বিধানসভায় একটি মাত্র আসন ছিল মমতার। অন্যদিকে ত্রিপুরা ও গোয়ায় কোনো আসন ছিল না। তবে ইতিমধ্যে ত্রিপুরার পৌর নির্বাচনে তৃণমূল লড়ে মাত্র এই রাজ্যের পৌরসভার একটি ওয়ার্ডে জয় লাভ করে। আর ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা পৌর করপোরেশনের ৫১টি ওয়ার্ডের একটিতেও জিততে পারেনি। ফলে ভেঙে যায় ত্রিপুরা দখলের প্রাথমিক স্বপ্ন। ২০২৩ সালে হবে ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচন।
এদিকে ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া গোয়া এবং মণিপুর বিধানসভার নির্বাচনে একটি আসনও জোটাতে পারেননি মমতা। ফলে অন্য রাজ্য দখলের স্বপ্নও আপাতত ভেঙেচুরে যায়।
এবারের নির্বাচনে পাঞ্জাবে জয়ী হয় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। অন্য চার রাজ্য উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, মণিপুর ও গোয়ায় জয়ী হয় বিজেপি। ফলে হিসাবের খাতায় এবার মমতাকে টপকে ওপরে উঠে আসে আপ বা আম আদমি পার্টি। দলটি এবার পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে আম আদমি কলকাতায় আয়োজন করছে এক পদযাত্রার। এখানেই আম আদমি আজ জানান দেবে, তারা আসছে পশ্চিবঙ্গের রাজনীতিতে। তাই আজ বিকেলে কলকাতার গিরিশ পার্ক থেকে শুরু হবে এই পদযাত্রার। শেষ হবে ধর্মতলায়।
আম আদমির দায়িত্বপ্রাপ্ত এই রাজ্যের পর্যবেক্ষক সঞ্জয় বসু গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁদের দল ইতিমধ্যে এই রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ১৫টি জেলায় কমিটি গঠন করেছে। গতকাল তাঁরা উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত এবং মালদহের রতুয়ায় সভা–সমাবেশ করেছে। শুরু করেছে সদস্য সংগ্রহ অভিযান। সেই অভিযানে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান হয়েছে, লাগানো হয়েছে পোস্টারও।
সঞ্জয় বসু আরও বলেছেন, আম আদমির লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত বাংলা গড়া। সেই দলে নেওয়াও হবে দুর্নীতিমুক্ত ও বিতর্কহীন মানুষদের। তিনি আরও বলেছেন, এখন মমতার চেয়ে আপ গোটা ভারতে বেশি জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা পেয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ ভোট আর পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে আপ পেয়েছে ৫১ শতাংশ ভোট। ফলে জনপ্রিয়তার নিরিখে আপ ছাড়িয়ে গেছে তৃণমূলকে। তাই ২০২৩ সালের রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম নামবে এই রাজ্যে আম আদমি।
আম আদমির এই আগমনকে যে খুব ভালোভাবে নিচ্ছেন না, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিদের কথায় তা স্পষ্ট।
গতকাল কলকাতার মেয়র ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, এই রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে মমতাই যথেষ্ট। এখানে অন্য দলের প্রয়োজন নেই। মমতাই পারবেন এই রাজ্যপাট থেকে বিজেপিকে হঠাতে।
ফিরহাদ বলেছেন, আজ কংগ্রেসের বিজেপিবিরোধী লড়াই করার শক্তি নেই। এখন বিজেপিকে রুখতে পারেন মমতা। আর তা প্রমাণ হয়ে গেছে গত বছরের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে। এখন দেশের সব আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উচিত মমতার পাশে থেকে বিজেপিবিরোধী লড়াই জোরদার করা, মোদিকে হটানো।
পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বিক্ষুদ্ধ নেতা–কর্মীরা আম আদমিতে ভিড়তে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।