কাশ্মীরিদের ওপর হামলা থামান, নির্দেশ ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের
রাজ্যে রাজ্যে কাশ্মীরিদের ওপর আক্রমণ থামান। ভারতের ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে এই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এই নির্দেশও দিয়েছেন, কাশ্মীরিরা যাতে সামাজিক বয়কট ও কোনো রকমের হেনস্তার শিকার না হন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারদের তা নিশ্চিত করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন এক বেঞ্চ আজ শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়ে বলেন, গণপিটুনি রুখতে রাজ্যে রাজ্যে নির্দিষ্টভাবে যে পুলিশ কর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কাশ্মীরিদের ওপর আক্রমণ রোখার দায়িত্বও তাঁদের দেওয়া হোক। সেই কর্তাদের নাম ও তাঁদের ফোন নম্বর সব জায়গায় প্রচার করা হোক, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চট করে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এবং আক্রান্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
কেন্দ্র ছাড়া যে রাজ্যগুলোকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ছত্তিশগড়, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও দিল্লি।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জন আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানের মৃত্যুর পর বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রী ও শাল ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা হচ্ছে। অনেকে আহতও হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে কাশ্মীরি এক বিশিষ্ট ডাক্তারকেও হেনস্তা হতে হয়। তাঁদের রাজ্য ছেড়ে কাশ্মীরে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে অনেকে চলেও গেছেন। কাশ্মীরি পণ্য বয়কটের ডাকও দেওয়া হয়। মেঘালয়ের রাজ্যপাল বিজেপি নেতা তথাগত রায় টুইট করে কাশ্মীরিদের সব রকমভাবে বয়কটের ডাককে সমর্থনও করেছেন। এর মোকাবিলায় তারিক আদিব নামে এক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে জরুরি ভিত্তিতে তা শোনার আবেদন জানান। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশ। এই বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, কাশ্মীরি ও সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের খবর পাওয়ামাত্রই রাজ্যের মুখ্যসচিব, পুলিশের মহাপরিচালক এবং দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আগামী সপ্তাহে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। এই নির্দেশ দেওয়ার জন্য জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। টুইট করে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের যা করা উচিত, তা করতে সুপ্রিম কোর্টকে নির্দেশ দিতে হচ্ছে। হবে না–ই বা কেন? এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শুধু অভিযোগ খণ্ডনে ব্যস্ত, এক রাজ্যপাল ব্যস্ত হুমকি দিতে। পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভাগ্যিস সুপ্রিম কোর্ট রয়েছেন!’
কেন্দ্রীয় সরকারের বিড়ম্বনা অবশ্য অব্যাহত। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামাকান্ড ঘটার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফটোশুট চালিয়ে যাওয়ার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা বিজেপি নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরযেওয়ালা সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ‘উদাসীনতার’ যে সমালোচনা করেছিলেন, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী আজ তা আরও তীক্ষ্ণ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’ ও ‘ফটোশুট সরকার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, দেশ যখন হাহাকার করছে, উনি তখন হাসিমুখে ছবি তুলে যাচ্ছেন! বিজেপি নেতারা যতই বলুন, প্রধানমন্ত্রী মিনিটে মিনিটে পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন, বিড়ম্বনা এড়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীকে কেন দেরিতে খবর দেওয়া হয়, সেই প্রশ্নের পাশাপাশি জরুরি জিজ্ঞাসা, খবর পেয়েই নরেন্দ্র মোদি কেন শুটিং বাতিল করে দিলেন না? কেন পৌনে চার ঘণ্টা ছবি তুলে গেলেন? সন্ধে ৭টা বেজে ৭ মিনিটে সরকারি অতিথিশালায় চা-শিঙাড়া খেতে খেতে খোশগল্প করছিলেন?
সরকারি ভাষ্য অবশ্য জানিয়েছে, নেটওয়ার্কিং সমস্যার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ঘটনার খবর দিতে কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছে। তবে খবর পেয়েই মোদি কথা বলেছেন রাজনাথ সিং, অজিত দোভাল ও জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে।
বিতর্ক অব্যাহত। পুলওয়ামার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপিয়ে আজ টুইট করেন দিল্লির কংগ্রেস নেতা হারুন ইউসুফ। তাঁর কটাক্ষ, ‘কার ঘরে ৩ কেজি গরুর মাংস রয়েছে, নরেন্দ্র মোদি তা জেনে যান। অথচ সাড়ে তিন শ কেজি আরডিএক্সের (পুলওয়ামা–কাণ্ডে ব্যবহৃত বিস্ফোরক) খোঁজ পান না!’ বিজেপি এই টুইটে ক্ষুব্ধ। তারা বলেছে, কংগ্রেস সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। কাশ্মীরের সবকিছু বয়কট করার ডাক সমর্থন করায় মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়কে নিয়েও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ‘বিষয়টি সমর্থনীয় নয়’ বলে মন্তব্য করলেও বিজেপির শরিক অকালি দলের সাবেক সাংসদ নরেশ গুজরাল বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য। একজন রাজ্যপালের কাছ থেকে এই মন্তব্য আশা করা যায় না। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের উচিত এখনই হস্তক্ষেপ করা।’