করোনায় ভারতে বায়ুদূষণ কমে ঝকঝকে আকাশ
বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে প্রায়ই শীর্ষে থাকে ভারতের দিল্লি। কিন্তু গত মাসে যখন দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন দেওয়া হলো, গণপরিবহন বন্ধ করা হলো, তারপর থেকে চিত্র পাল্টে গেছে। দেশটির দূষিত শহরগুলোতে আগে যেখানে আকাশ দেখাই যেত না, এখন সেখানে নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে। বাতাস আগের চেয়ে পরিষ্কার। আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বায়ুদূষণ কমে যাওয়ায় স্বচ্ছ আকাশের ছবি তুলে মানুষ শেয়ার করছে। এমনকি যেসব শহর থেকে হিমালয়ের চূড়া দেখা অসম্ভব ছিল, সেখানে মানুষ এখন তা দেখতে পাচ্ছে।
ভারতের দিল্লিভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়ার একটি গ্রুপ এর মধ্যে শহরের পরিষ্কার আবহাওয়ার বিষয়টি উদযাপন করেছে। দেশটির রাজনীতিবিদ ও লেখক শশী থারুর লিখেছেন, 'নীল আকাশ দর্শন এবং পরিষ্কার বাতাসের শ্বাস নেওয়ার আনন্দ আমাদের বাকি সময়গুলোতে কী হয়েছে, তা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট।'
ঠিক ছয় মাস আগে দিল্লিতে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর ছিল। কর্তৃপক্ষ বলেছিল, এখানকার বায়ুদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। স্কুল বন্ধ, ফ্লাইট ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছিল। মানুষকে দরজা জানাল বন্ধ রাখতে ও মাস্ক পরে চলাচল করতে হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ভারতের দিল্লিসহ ১৪ টি শহর স্থান পেয়েছিল। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর বায়ুদূষণজনতি রোগে ১০ লাখ ভারতীয় মারা যায়।
ভারতের বিশেষজ্ঞরা লকডাউনের ফলে বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।বায়ুমানের পূর্বাভাস সরবরাহকারী একটি স্বাধীন গবেষণা গোষ্ঠী আরবান এমিশনের প্রধান শরৎ গুটিকুন্ডা বলেন, 'বায়ু দূষণের মাত্রাগুলো কীভাবে একটি অসাধারণ বিকাশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা ঘনিষ্ঠভাবে দেখার জন্য এটি একটি অভূতপূর্ব সুযোগ ছিল।'
ফেডারেল পলিউশন কন্ট্রোল কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির ৮৫টি শহরে বায়ুমানের উন্নতি হয়েছে।
সেন্টার ফর এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের গবেষণা সুনীল দাহিয়া বলেছেন, 'বর্তমান সংকট আমাদের দেখিয়েছে যে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো কমাতে যদি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে পরিষ্কার আকাশ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস খুব দ্রুতই অর্জন করা যেতে পারে।'
জলবায়ু বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অরুনাভ ঘোষ বলেন, 'আমাদের এখনো পরিষ্কার বাতাসের জন্য গণতান্ত্রিক চাহিদা নেই। নীল আকাশ এবং তাজা বাতাসের অভিজ্ঞতা ভারতে পরিষ্কার বাতাসের জন্য গণতান্ত্রিক চাহিদা তৈরি করতে পারে। চীন যদি সাড়ে চার বছরে বায়ু দূষণকে ৩২ শতাংশ হ্রাস করতে পারে, তবে কেন ভারত ২০২৭ সালের মধ্যে ৮০ টি শহরে ৮০ দূষণ হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে না?'