করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি নিয়ে সাবধানী ভারত
করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি আশা জাগালেও এই পদ্ধতি এখনো পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন ব্রিফিংয়ে আজ মঙ্গলবার এই কথা জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ কর্তা বলেন, প্লাজমা থেরাপিতে করোনা সেরে যাবেই এখনই দৃঢ়ভাবে বলার সময় আসেনি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) সারা দেশে এই পরীক্ষা চালাচ্ছে।
দিল্লিতে প্লাজমা থেরাপিতে কিছু ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই কারণে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীদের রক্ত ও প্লাজমা দান করার অনুরোধ করেছেন। অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। তারই মধ্যে এই সাবধানবাণী শোনানো হলো।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অবশ্য মঙ্গলবার জানিয়েছে, কম বা সামান্য সংক্রমিত করোনা রোগী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে এবার থেকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো যাবে। হাসপাতালে বা কোভিড সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
গত ৭ এপ্রিল জানানো হয়েছিল, সব সন্দেহজনক ও পরীক্ষিত করোনা রোগীকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। আজ নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, যাঁদের সংক্রমণ খুবই সামান্য বা সর্দিকাশির জন্য যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়ি রেখে চিকিৎসা করা যাবে। তবে কোনো চিকিৎসককেই সেই নিদান দিতে হবে। বলতে হবে, বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা যাবে কি না। যে বাড়িতে আলাদাভাবে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব, শুধু সেখানেই অল্প সংক্রমিতদের রাখা যাবে। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা বাড়ির সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোগীর শ্বাস নিতে অসুবিধে হলে, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হলে, ঠোঁট ও মুখে নীলচে আভা দেখা দিলে, ত্বকের রং বদলালে বা ঝিমুনি ভাব দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসককে খবর দিতে হবে। আর বলা হয়েছে, বাড়িতে থেকে চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে মুচলেকা দিতে হবে।
ভারত গত মঙ্গলবার চীন থেকে আমদানি করা ৫ লাখ র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযোগ, ওই কিট ত্রুটিপূর্ণ। আইসিএমআর-এর এই সিদ্ধান্তে চীন 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছে। আজ দিল্লিতে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র জি রং এক বিবৃতিতে বলেন, কিট সম্পর্কিত আইসিএমআরের মূল্যায়নে তাঁরা গভীর উদ্বিগ্ন। ঠিকমতো পরীক্ষা না করেই কিটগুলো ত্রুটিযুক্ত বলা হয়েছে। তিনি বলেন, রপ্তানিযোগ্য চিকিৎসা পণ্যের গুণমান ঠিক রাখাকে চীন অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। কিছু ব্যক্তি চীনা পণ্যকে ত্রুটিযুক্ত বলেছেন। এটা অন্যায় ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। গুণগত মান পরীক্ষার পরেই এই কিট ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশে পাঠানো হয়েছে। চীনের পাঠানো কিট নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছে ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, চেক প্রজাতন্ত্র, জর্জিয়া ও তুরস্ক।
এদিকে আগামী ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ। তারপর কোন রাজ্যে কতটা লকডাউন থাকবে, কী কী পরিষেবার অনুমতি দেওয়া যাবে আপাতত তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে। এই অবস্থায় মঙ্গলবার দিল্লি সরকার আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিল। কলের মিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, পশু চিকিৎসক, ওয়াটার পিউরিফায়ার সারানোর কারিগর, স্কুলের বই বিক্রেতারা কাজ শুরু করতে পারবেন। ওষুধের দোকান আগে থেকেই খোলা। এবার ডাক্তারদের ক্লিনিক, প্যাথোলজিক্যাল ল্যাব খুলে দেওয়া হলো। শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীদের দেখাশোনা করা 'হোম'ও খোলা যাবে। তবে স্কুল, কলেজ এখনো বন্ধ থাকবে। গুরুত্ব দেওয়া হবে অনলাইন লেখাপড়া ও ডিসট্যান্স লার্নিংয়ের ওপর।