‘এক নেতা এক পদ’ নীতি থেকে সরলেন মমতা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস চলবে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতিতে। অর্থাৎ দলটির নেতারা যেকোনো একটি পদে থাকতে পারবেন, এর বেশি নয়। এমনটাই ঘোষণা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নিজের ঘোষিত সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন মমতা। কলকাতা পৌর করপোরেশনের নির্বাচনে তিনি এমন কিছু নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, যাঁরা আগে থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
এবারের কলকাতা পৌর করপোরেশনের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন একজন সাংসদ, ছয়জন বিধায়ক এবং দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও বিভিন্ন নেতা–নেত্রীদের পরিবারের সদস্যরা। মূলত এর মধ্য দিয়ে এক নেতা এক পদ নীতি থেকে সরে এলেন মমতা।
তৃণমূল কংগ্রেস এবারের কলকাতা পৌর করপোরেশনের নির্বাচনে ১৪৪টি আসনের মধ্যে ৮০ জন পুরুষ ও ৬৪ জন নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে সংখ্যালঘু ২৩ জন। নতুন মুখ ৩৯ জন। বাদ দেওয়া হয়েছে এখনকার ৩৯ জন কাউন্সিলরকে।
দলীয় নেতা–নেত্রীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন মমতার ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ শান্তনু সেনের স্ত্রী কাকলী সেন, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ছেলে সৌরভ বসু, মন্ত্রী শশী পাঁজার মেয়ে পূজা পাঁজা, বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার ছেলে সন্দীপন সাহা, প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়, কাউন্সিলর তারক সিংয়ের ছেলে ও মেয়ে প্রমুখ।
তৃণমূল থেকে আরও মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান পৌর প্রশাসক ও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাবেক ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিলর অতীন ঘোষ, দেবাশীষ কুমারসহ বর্তমানে কাউন্সিলর পদে থাকা ৮৭ জন।
মনোনয়ন পেলেন না বাবুল সুপ্রিয়
কলকাতা পৌর করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়কে মনোনয়ন দেয়নি তৃণমূল। বাবুল সুপ্রিয় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী, বিজেপির সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) থেকে সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তিনি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তৃণমূলে যোগদানের পর বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে দলটিতে জল্পনা শুরু হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, তৃণমূল হয়তো বাবুল সুপ্রিয়কে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য কিংবা রাজ্যসভার সাংসদ করে নেবে।
কিন্তু বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগদানের পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার উপনির্বাচন ও রাজ্যসভার শূন্য আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এসব নির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়কে মনোনয়ন দেননি মমতা। এরপর থেকে গুঞ্জন শোনা যায়, তৃণমূল হয়তো তাঁকে কলকাতার মেয়র পদে বসাতে পারেন। কিন্তু গতকাল শুক্রবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে মনোনীত প্রার্থীদের ঘোষিত নামের তালিকায় নেই বাবুল সুপ্রিয়র নাম।
বাবুল সুপ্রিয় মনোনয়ন না পেলেও রাজ্যসভার দুটি শূন্য পদের প্রার্থী হিসেবে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া সাবেক সাংসদ সুস্মিতা দেব ও গোয়ার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফেলেইরোকে মনোনয়ন দিয়েছেন মমতা।
বাবুল সুপ্রিয় ২০১৪ সালে প্রথম বর্ধমানের আসানসোল আসনে সাংসদ হন। এরপর হন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে আবার তিনি সাংসদ হন আসানসোল আসন থেকেই। তবে চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি তাঁকে টালিগঞ্জ আসনে বিধায়ক পদে প্রার্থী করে। সেই নির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয় হেরে যান।
এরপর তিনি তাঁর পূর্বের সাংসদ পদ নিয়ে রাজনীতিতে থেকে যান। কিন্তু গত ৮ জুলাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার পুনর্গঠনের সময় বাদ পড়ে যান তিনি। বাদ পড়েন এই রাজ্যের অপর প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীও। এর পরিবর্তে বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় এই রাজ্য থেকে নতুন চারজন প্রতিমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত করেন। বিজেপির এই পদক্ষেপ মানতে না পারায় দল ছেড়ে তৃণমূলে আসেন বাবুল সুপ্রিয়।