অগ্নিপথ নিয়ে বিক্ষোভ প্রশমনে চাকরির প্রতিশ্রুতি সরকারের
অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে ভারতজুড়ে যে আগুন জ্বলছে, তা প্রশমনে বাড়তি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। যুব অসন্তোষ কমাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দুজনেই বলেছেন, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্নিবীরদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি এ কথাও কঠোরভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, হিংসাত্মক বিক্ষোভকারী যুবকদের ভবিষ্যতে চাকরি পেতে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। বলা হয়, সেনাবাহিনীতে চাকরি পেতে গেলে পুলিশি যাচাই জরুরি। সেখানে আপত্তিকর প্রতিবেদন থাকলে কেউ চাকরির যোগ্য বলে গণ্য হবেন না।
অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ভারতের ৮-৯ রাজ্যে বিক্ষোভ চরমে উঠেছে। বিহারে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় আজ শনিবার বিকেলে। রোববারও অনেকক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলা হয়েছে। এই প্রবল বিক্ষোভে সরকার বিব্রত, বিরক্ত ও তটস্থ। তাই সময় নষ্ট না করে ক্ষোভ প্রশমনে তৎপর। কৃষি আইনের ক্ষেত্রে সরকার যে অনমনীয় মনোভাব নিয়েছিল, এ ক্ষেত্রে আচরণ সম্পূর্ণ বিপরীত। দ্বিতীয় দিনেই তাই প্রথম বছরের জন্য বয়সসীমায় ছাড় দেওয়া হয়। কোভিডের কারণে দুই বছর নষ্ট হওয়ায় অগ্নিপথে যোগদানের বয়সসীমা প্রথম বছর ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৩ করা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় সরকার আরও ছাড়ের পথে এগিয়েছে।
আজ সকালে অমিত শাহ জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) ও অসম রাইফেলসের নিয়োগে অগ্নিবীরদের (অগ্নিপথ প্রকল্পে চার বছর কাটানোর পর যে ৭৫ শতাংশকে ছাঁটাই হতে হবে) জন্য ১০ শতাংশ নিযুক্তি সংরক্ষিত থাকবে। এ ছাড়া চার বছর পর এসব বাহিনীতে চাকরির জন্য বয়স যাতে বাধা না হয়, সে জন্য প্রথম ব্যাচের অগ্নিবীরদের জন্য পাঁচ ও পরবর্তী ব্যাচের জন্য তিন বছর বয়স ছাড় দেওয়া হবে। দুপুরে প্রতিরক্ষাপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনার পর রাজনাথ সিং জানান, উপকূলরক্ষী বাহিনীতেও অগ্নিবীরদের জন্য ১০ শতাংশ আসন রাখা হবে।
বয়সসীমা ও চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির ঘোষণা সত্ত্বেও বিক্ষোভ সেভাবে কমেনি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার দুভাবে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিন বাহিনীর প্রধান এবং উচ্চপদস্থ কর্তাদের বলা হয়েছে প্রচারমাধ্যমে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরতে। পাশাপাশি এ কথাও বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীতে যাঁরা চাকরি পেতে চান, তাঁদের স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে হবে, হিংসাত্মক বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রতিবেদন থাকলে চাকরির দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরী গতকাল এক সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে এই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সেনায় চাকরি পাওয়ার শেষ ধাপে রয়েছে পুলিশি যাচাই বা পুলিশ ভেরিফিকেশন। তাতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও হিংসাত্মক হয়ে ওঠার প্রতিবেদন থাকলে চাকরির দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তার উত্তর দেওয়ার অনেক মানুষ রয়েছেন। কিন্তু হিংসা সমাধানের পথ নয়।
অগ্নিপথের আগুন সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে বিহার ও উত্তর প্রদেশে। বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পড়ে শুধু বিহারেই নষ্ট হয়েছে ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। বিহারের দানাপুর রেল ডিভিশনের কর্তা প্রভাত কুমার সংবাদ সংস্থা এএনআইকে এই হিসাব দিয়েছেন। গতকাল সকালেও বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ চলে। অবরোধ হয় রেল ও সড়ক। পাটনার অদূরে জ্বালানো হয়েছে এক রেলস্টেশন। বেশ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। মুঙ্গেরের ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। রাজ্য পুলিশ ইতিমধ্যে ৮০ জনকে চিহ্নিত করেছে। ধরেছে ১২ জনকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ট্রেন চলাচল সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কোভিডে আক্রান্ত কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বিক্ষোভে বিচলিত। হাসপাতাল থেকে তিনি যে বার্তা পাঠিয়েছেন, দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ গতকাল তা প্রকাশ করেন। দেশের যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে সেই বার্তায় সোনিয়া সবাইকে সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ভারতীয় সেনায় ভর্তি হয়ে আপনারা দেশের সেবা করতে আগ্রহী। সেনাবাহিনীতে লাখো পদ খালি। অথচ গত তিন বছর কোনো নিয়োগ না হওয়ায় আপনাদের কষ্ট বুঝতে পারছি। আপনাদের প্রতি আমার সহানুভূতি রয়েছে। দুঃখ এই যে সরকার যে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছে, তা পুরোপুরি দিশাহীন। সাবেক সেনানী ও বিশেষজ্ঞরাও এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছেন।’ সোনিয়া এই প্রসঙ্গে বলেছেন, কংগ্রেস এই প্রকল্প ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষে। কিন্তু তা করতে হবে সংযম ও অহিংস পথে। বিক্ষোভকারীদের দাবি ন্যায্য বলার পাশাপাশি সোনিয়া বলেছেন, আন্দোলন যেন হিংসাত্মক না হয়। বিক্ষোভ, আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকা জরুরি।